বালিকা
দেখেছেন এই বালিকাকে ? কমলিকা । কমলিকা প্রামাণিক । দশম শ্রেণী । পিতা: অবনী প্রামাণিক
। সাল: ২০২০ খ্রিস্টাব্দ । সময়: বেলা দ্বিপ্রহর । সময় বয়ে যায় । দিন চলে যায় । কমলিকা বিকেল নিয়ে বসে আছে কাঁচা
মাটির বারান্দায় । এই গ্রামে, বেশীর ভাগই মাটির ঘর । তাকে ব্যস্ত করে রাখে বিকেলের
নিভে আসা, একলা যাপন, বিদ্যালয়, সিলেবাস, পাটিগণিত, জীবনবিজ্ঞান, বাংলার জীবনানন্দের
শটিবনের ছায়া । তার বিকেল মানে কৈশোর ছাপিয়ে একান্ত মুকুরের হাতছানি । তার শরীর আর
কল্পনার এক উজ্জ্বল মিশ্র-কলার বিস্ময় । ঘরের কানাচ ভরে তার আমড়া গাছ, কাঁঠাল গাছ,
কাঁটা-ঝাড়, আস্টেল আর গুল্মের বাগান । ফুলবাগানের পাশ দিয়ে কাঁচা পায়ে হাটা রাস্তা
চলে যায় প্রপিতামহের কোদালে কাটা পারিবারিক পুকুরের ঘাটে । আম জাম সজিনার বনস্পতির
সবুজ প্রান্তে তার যেন একান্ত অবসর । এই হলো সৌন্দর্য । সে লক্ষ্য করছে অনেকক্ষণ ধরে,
একটি সবুজ গুল্মের ডালে কোমর বেঁকিয়ে হেঁটে যায় একটি শুঁয়াপোকা ।
কমলিকা বিস্মিত চোখে দেখছেন, শুঁয়োপোকাটা পায়ে পায়ে হেঁটে যাচ্ছে শাখা প্রশাখায়
। ওর গায়ে সবুজ পাতার ছায়া । ছায়াও যেন কিছুটা সবুজ । সে হেঁটে যাচ্ছে আগামী মুহূর্তগুলির পরিসীমায়, আর
একটি মুহূর্ত বুঝি যে কোন সময় এই 'ড্রিম মোমেন্ট' , 'আহা' শব্দে উপনীত হতে পারে । মোহময়
পৃথিবীতে আগামী জীবনের এই সমস্ত অভিজ্ঞান কোন শুঁয়ো, কোন পিঁপড়ে জানে নি বোধহয় । মানুষও
বোধহয় না ।কাল কি হবে মানুষ তা জানে না । আর বিশ্বভরা প্রাণের মধ্যে মানব-প্রজাতিই
এক মাত্র যখন বাড়তি । মানুষ তার আগামীর তাড়নায় পিষে যাচ্ছে নিজে । নিজের ভারে, নিজেই
ন্যুজ । মেধার বাণিজ্যে পসার হচ্ছে স্বয়ং মানুষ ।
মানুষ দ্রব্য । মানুষ শিল্প । শিল্প
পণ্য । শিল্পবুমে ফেটে পড়েছে অন্তর্জালিকা। সোশাল মিডিয়ায় শিল্পকর্মের জোয়ার । অধিক
থেকে অধিকতর হোমো সেপিয়েন্স গান গাইছে, নাটক করছে, সিনেমা করছে, ছবি আঁকছে এবং অবশ্যই
কবিতা লিখছে । বলা যায়, শিল্পমাধ্যমের ভিতর কবিতা লেখা একটা অধ্যায় যা অন্যতর মাত্রায়
পৌঁছে গেছে । তাতে ভারতবর্ষ কেন পিছিয়ে থাকবে ? আর বাংলা ? বাংলা ও বাঙালির কাব্য প্রিয়তা
নিশ্চয়ই অজানা নয় । বাংলা ভাষায় কবিতার মান কি, বাংলা কবিতার স্থান ও আগামীর সম্ভাব্য
নিয়ে আমাদের উৎসুকতা বাড়ছে । এমতাবস্থায়, এমন কি কি প্যারামিটার বাংলা কবিতাকে নিয়ন্ত্রণ
করছে ? কতগুলি উপাদান, শুধু বাংলা ও বাঙালি আর কতগুলি ফ্যাক্টর বহিরাগত । সাধারণ জ্ঞানে এইটুকু বলা যায়, বাংলা সাহিত্যের
কবিতাকে বাঙালি ছাড়াও অন্যান্য অনেক কিছুই তার নিয়ন্ত্রণ করে । এই ফেসবুক, যা কিনা
বাঙ্গালির নিজস্ব নয়, অথচ তা নির্ধারণ করছে কার জনপ্রিয় হবে আর কার কবিতা বিক্রি হবে
। বাজার যদিও বাংলার, কিন্তু ফ্যাক্টরটি বহিরাগত । বরং বলা যায় কি বিক্রি হবে আর কি বিক্রি হবে তার
কতটুকু বাঙ্গালির হাতে ? বাঙ্গালির (কবিতা) পাঠ , কাব্য প্রিয়তা, পদ্য অন্তরঙ্গতা,
গদ্য প্রস্তুতি সাহিত্য-বাস্তুতন্ত্রের কোন পর্যায়ে তা ভাষা নিজে নিয়ন্ত্রণ করছে না
। বাঙ্গালির কবিতা লেখার প্রয়াস, শব্দবন্ধ, শব্দচাষ, গীতিময়তা, আধুনিকতা, সাহিত্য ভাষা,
কবিতা, গদ্য কোন রূপে কোন পথে অদূর আগামীতে চালিত হবে তার কোন রূপরেখা আমাদের সত্যই
জানা নেই । কিন্তু কিছুটা আন্দাজ করা যায় ।