তা যখন আন্তর্সজ্জা বা অরিয়েন্টেশন নিয়ে কথা হচ্ছিলো , বোধ ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে
কি ? অর্থাৎ প্রশ্ন আসে, সেই বোধ কি এক রৈখিক ? প্রিয় পাঠক এতক্ষণ এই সব প্রশ্ন, ভূমিকাকে
পার করে আপনি নিশ্চয় এর একটি লজিক্যাল উত্তর চাইছেন ? আর যদি উপমা যদি চুম্বক হয় ,
তবে নিশ্চয়ই উত্তর ও দক্ষিণ মেরু বা দিক থাকবে । এইটা হলো আমাদের অরিয়েন্টেশন । অথবা
দিক-মার্গ । আমরা অরিয়েন্টেশনকেও একটা বদ্ধ ধারণার ভিতর আটকে ফেললাম ।
এইবার দেখা যাক: দিক শুধু দক্ষিণ বা উত্তর কেন হতে যাবে । দিক তো আরও আছে । পুব
পশ্চিম ঈশান, নৈর্ঋত ... সংজ্ঞা অনুযায়ী তবে দিক হয় 'দশ' । অর্থাৎ দশটি অরিয়েন্টেশন
হবে ।নট ব্যাড । খানিক টা এগোনো গেলো । দুই দিক থেকে দশ দিকে পৌঁছানো গেলো । কিন্তু
কিছুটা তথ্য ভুল ও হয়ে গেলো । চুম্বক কোন দিন
দশ দিকে ওরিয়েন্টেশন হয় না । আর যদি হয়, সেটা হয় ইউনিডাইরেকশন ।
এই ভাবে আমি, যে কোন শুঁয়োপোকার পরিণত
রূপ একটি প্রজাপতি হিসাবে ধরতে পারি না । আপনিও হয়তো ধরবেন না । কিন্তু... কিন্তু তাই বলে, তাই বলে তরুণ কবি সুজয়বরণ ঘোষ বা
ডাকসাইটে মিস অনামিকা চ্যাটার্জী যে প্রতিদিন সেলফি সাজিয়ে সাজিয়ে ফেসবুকে কবিতা পোস্ট
করেন, সে কি কবিতা লেখা বন্ধ করে দেবেন ? নাকি কবিকুল ফেসবুকে কবিতা লিখে কোন দিন মহাকালে
স্থান পাবেন না ?
কবিতা বা টেক্সট লেখার অরিয়েন্টেশন রয়েছে । কিংবা থাকাটা তেমন অস্বাভাবিক না ।
টেক্সট একটি অভিধান ভিত্তিক শব্দাবলীর নেটওয়ার্ক । সেইখানে আমাদের দিক নির্ণয় ক্ষমতা
প্রত্যেক টেক্সটকে একটি প্যাটার্ন দেয় । সেই টেক্সটি একটি মাত্র শব্দ হতে পারে অথবা
অনেকগুলি শব্দের সমষ্টি । কিছু শব্দদিয়ে বাক্য গঠন করা যায়, কিছু দিয়ে ব্যাকরণ মতে
বাক্য গঠন করা যায় না । অর্থাৎ সংজ্ঞাকে সংজ্ঞা অতিক্রম করে যায় । শব্দগোষ্ঠির নিজেরই
একটা বৃত্ত আছে । জীবন চক্র । যেটা শিশু বা কবি বা ঔপন্যাসিক শেখেন, শিখতেই থাকেন ।
তার অরিয়েন্টেশন বাড়তে থাকে । তাতে দিক শুধু উত্তর দক্ষিণ বা দশদিকে আবদ্ধ থাকেনা ।
কোন বাক্যের যে কোন পদ থেকে অরিয়েন্টেশন বিচ্ছুরণ হতে থাকে । আর আমাদের ধারনা দিয়ে সেইটা পরিমাপ করার চেষ্টা
করি, বলা যায় আমাদের পরিচিত প্যারামিটার দিয়ে তা মাপার চেষ্টা করি । দূরত্বকে কে সেন্টিমিটার,
তাপমাত্রাকে ফারেনহাইট, আর প্রখ্যাত কবিকে আমরা মাপি সে কতগুলো পুরস্কার পেয়েছে । এই
সব পরিমাপ আমাদের জানা । যেভাবে আমরা আন্দাজ করলাম যে মিস কমলিকার দেখা শুরুয়াতের শুঁয়োপোকাটি
একটি প্রজাপতিতে পরিণত হবে । নট ব্যাড । এগেইন । এতটা বোধ আর দিগদর্শন নিয়ে নানান ফ্যাঁকড়া
শোনার পরেও আমরা কিন্তু এই টেক্সটটা পড়েই চলেছি অথচ আমরা নিজেদের সিদ্ধান্ত থেকে এক
কদমও নড়িনি ।
তাহলে, কি এখনই বলে দিতে হবে শুঁয়োপোকাটির কি হবে ? তার কি দুটো মোলায়েম হালকা
পাতার হলুদ ডানা হবে ? তাতে চিহ্ন থাকবে ওঁ ? কচি সবুজের উপর দিয়ে সে উড়াল দেবে অন্য
কোন বাগিচায় ? কথা হলো এই যে, এইটা আমার একান্ত
ব্যক্তিগত ধারণা , নিজস্ব অভিমত , মৌলিক ভাবনা পরিসর । আমার মতে, আমাদের প্রত্যেকটি শুঁয়োপোকার জীবনচক্রের
ডায়েরী রাখা অসম্ভব । কিংবা সে খবর রেখেই বা কি হবে । আর যদিবা প্রত্যেক শুঁয়োপোকা
প্রজাপতি হলো, বা নাই হলো , তার উত্তরসূরি শুঁয়োপোকার জীবনচক্রে কাল, মহাকাল, অতিমহাকাল কি করছেন বা করবেন
- তার হিসাব আমরা কি করে রাখবো ? হুম । শুধু অসম্ভবই না, মহাঅসম্ভব, অতিমহাঅসম্ভব । অন্তত মানব সমাজে এইরকম কবি, সম্পাদক, লেখক, গল্পকার,
নাট্যকার, অথবা কোন করণিক জন্মান নি যিনি এই কাজটি করে যেতে পারেন । এই কাজটি করতে যে যত্ন, যে যোগাযোগ, যে নেটওয়ার্ক অবশ্য জরুরী
তা বাংলা ভাষার বর্তমান পরিসরে অনুপস্থিত । এটা হলো আমাদের জানা কথা । এইযে বালিকা
কমলিকা প্রামাণিক – বিকেল থেকে ফুলের বাগানে
গুনগুন গুঞ্জন করছেন, তাকে এখনই বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণযৌবনা বানাবেন না, তাকে বধুরূপে,
কুচশোভিত পুস্তকহস্তে সরস্বতী রূপে কল্পনা নাই বা করলেন । সে আপন তন-মনে বিকশিত হতে
চায় । সে চায় তার নিজের প্রেমের অরিয়েন্টেশন
। নিজের ধ্বনিপল্লবের দিগদর্শন। আর এইটাও হলো
অজানা । যে প্রস্ফুটন, যে নাজুক সুগন্ধি ফুল
তার মানব মনে লুকিয়ে আছে তাকে মুকুলেই উৎপাটিত কোর না ।
কমলিকা ভাবেন, এইসব ফুলবাগানের কথা । গুল্মের আবছায়া , মাটির সোঁদা-গন্ধ ছোঁয়া তার গায়ে জড়িয়ে থাকে । সে দেখেন, এই বারান্দা থেকে গ্রামের আড়পার দেখা যায় । ঐ গ্রামটির নাম মধুপুর । আর ঐ আকাশের নাম নীল । গোধূলি পার হয়ে যায় তার দৃষ্টি । কতটা দূর হবে মধুপুর কদমখালি থেকে । গ্রামে কোন মাইলস্টোন নেই । তার ইতিহাস আছে । তাই ভূগোল ও আছে । দিল্লি থেকে লাহোর কতটা দূরত্ব ? চেন্নাই থেকে সিডনি ? গুগল করলে দেখা যায় ৯১২০ কিলো মিটার । উইকিপিডিয়াও তাই বলে । মাপিপিডিয়াও । আমিও তাই বলি। আপনিও তাই বলেন । এটাই সত্য । এইবার, আমি মানে, আমি পীযূষকান্তি বিশ্বাস, যে মাঝে মাঝে খেয়লাখুশী হলে কবিতা লিখি, আর আপনি মানে যে আমাকে কবি হিসাবে মানেন না - অথচ এই যে এই লেখাটা পড়ছেন । এসবই ঘটছে ২০২০ সালে । মানে সত্য ঘটনা । এইবার যদি ঘড়িটা ২০০০০০০০ বছর এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, কিংবা ২০০০০০০০ বছর পিছিয়ে নেওয়া যায় - কল্পনা করুন দিল্লি যদিও দিল্লি ততদিন থাকে, সিডনি ততদিন যদি সিডনি থাকে, এবং ধরলাম গুগল ততদিন থাকে, আপনিও বেঁচে থাকলেন, আমিও বেঁচে থাকলেন । এতকিছু ধরে নেওয়ার পরেও ... মহাজাগতিক ভূগোল বলছেন, অস্ট্রেলিয়া আগে ভারতেরই অঙ্গরাজ্য ছিলো । কোন এক সময় তা মূল ভূখন্ড থেকে আলাদা হয়ে গেছে । অর্থাৎ চেন্নাই আর সিডনির দূরত্ব ছিলো শূন্য । তুমি কি শুধু মিথ, শুধু পটে লেখা ? হুম । ঐ যে কথাটা যা সত্য বলে ধরেছিলাম, তাহা মহাসময়ের তারতম্যে মিথ্যা । কিংবা জাস্ট মিথ । কিংবা সত্যমিথ্যা কিছুই ঠাহর হয় না ।
No comments:
Post a Comment