যখন কবিতা নিয়ে এতো কথা, তার নৈসর্গিক আপিল, তার গীতিময়তা, তার আবেগ, উপমা, রূপ
রস গন্ধ । অক্ষরে অক্ষরে এইযে প্রেম আর রক্তক্ষরণের ইতিবৃত্ত এই ঐশ্বরিক অনুভূতির সমতুল্য
। এই যে “সতত হে নদ মোর পড় মনে”, “আর কত দূরে নিয়ে যাবে মোরে হে সুন্দরী” “হাজার বছর
ধরে পথ হাঁটিতেছি” অথবা “যেতে পারি কিন্তু কেন যাবো” ।ছাপার অক্ষরে যে স্রোতের মতো
বয়ে যা আড্রিনালিন, অগ্নাশয়ে প্রজাপতি উড়ে যায় । কিন্তু এমনকি কোন পরিসর আছে যা এই
সমস্ত শব্দ, পঙক্তি, প্যাটার্ন খোঁজ, উৎপাদন,
সংরক্ষণ করা যায় ?
এই ধরুন: “যেতে পারি কিন্তু কেন যাবো” । যদি একটা সিরিজ হয় । “যেতে” আর “পারি”
শব্দের ভিতর প্রোগ্রেশনটা কি ? একটা শব্দ থেকে অন্য শব্দটা কি ভাবে এলো । ‘যেতে’ শব্দটা
আমরা প্রথম কোথায় শিখি ? আর ‘পারি’ শব্দটাই কেন পরে এলো ? হিডেন স্টেট কি কি ? “যেতে” র পরে “চাই” শব্দটিও
থাকতে পারতো । কবির মনের তখন কি অবস্থা , কি উপমা তার মনে বিরাজ করছিলো তার উপর নির্ভর
করে । তবু “পারি” শব্দটা যখন এসেই গেলো । “কিন্তু” শব্দটি আসার কতটা সম্ভাবনা কতটা
যদি পরিমাপ করা যেতো ? সেই ভাবে যদি “কেন” এবং “যাবো” শব্দদুটির প্রোবাবিলিটি কতো
? তাহলে, সেই অরিয়েন্টেশন, নেটওয়ার্ক, হিডেন স্টেট নামক প্যারামিটারগুলি এসে পড়ে ।
আর যেহেতু এই শব্দগুলি সমস্তই অভিধান থেকে নেওয়া, একজন বাংলাস্কুলে পড়া যে কোন ছাত্র
এই শব্দাবলী পারস্পারিক সহাবস্থান সম্পর্কে জানেন । সুতরাং এই শব্দচয়নের রূপ রস গন্ধ
বা আনুষঙ্গিক হিডেনস্টেটগুলি আইডিয়ালী লিখে ফেলা যায় । শিশু সেভাবেই শেখেন । কমলিকাও
সেইভাবে শিখছেন । শুঁয়োপোকা সিরিজের পরবর্তী সংখ্যা যে প্রজাপতি সে জেনে ফেলেছে । এখন
যার উড়াল দেবার পালা।
শব্দের পর কোন শব্দ আসে, তা আমদের শৈশব থেকে শিখতে হয় । কিছুটা শুনে, কিছুটা পড়ে,
কিছুটা আন্দাজ করে । প্রত্যেক শব্দের পর, আর একটি শব্দ আসে, সেখানেও অন্য শব্দের আগমন
ঘটে কিংবা ঘটে না । এই ভাবে অভিধানের প্রত্যেকটি শব্দ থেকে অন্য শব্দটির একটি লিঙ্ক
পথ আছে । শব্দাবলীর একটা বিশাল নেটওয়ার্ক যদি তৈরি করা যাইয় ? সেগুলিও যদি লিখে ফেলা
যায় । আর তার যদি কোন অর্থ থাকে , কিংবা অর্থ করে নেওয়া যেতে পারে ? এই মহাবিশ্বে এমন
কোন শব্দ, পঙক্তি বা বাক্য থাকতেই পারে যা মানব বোধের কাছাকাছি? মানুষের ইতিহাসের কাছাকাছি
? এমন কি কোন সিরিজ নাম্বার আছে যার এরিথমেটিক প্রগ্রেশন একটি মানুষের বোধগম্য প্যাটার্ন
? যদি ‘অবতারে’ উল্লেখিত সেই বৃক্ষটি এই ‘আর্থ’এ
থাকতো, আর আমরা সেই বোধগুলি ডাউনলোড করে ভ্যালিডেট করে নিতাম ।
একটু উচ্চাকাঙ্ক্ষী হলে প্রশ্ন করা যায়, টেক্সট ( বাক্য ) কি জেনারেট (উৎপাদন) করা যায় ? মানে আনুষঙ্গিক শব্দাবলী ? নিদেনপক্ষে
সম্ভাব্য শব্দাবলী ? যে ভাবে একটি শিশু করেন ? যে ভাবে কমলিকা ভাবেন শুঁয়োপোকাটি একটি
প্রজাপতিতে রূপান্তরিত হবেন কিনা ?কবিতা না হোক, মহাবিশ্বের সমস্ত শব্দাবলীকে একত্র
করে কিছু অর্থসম্পন্ন বাক্য কি গঠন করা যায় ?
হয়তো যায় । ম্যাসিন পারে । ম্যাসিন শিখতে পারে । ম্যাসিন, মানব জীবনের বহুকর্মে
ব্যবহৃত হচ্ছে। ম্যাসিন, মানুষেরই লিখিত এই আশ্চর্য কবিতা । যা নিজেই একটা বক্তব্য,
কবিতা হতে গেলে শুধু অক্ষর হওয়াই জরুরী নয় । অক্ষর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে এই সংজ্ঞা কিন্তু
অক্ষর কে ছাড়িয়ে যাচ্ছে না ।
No comments:
Post a Comment