Saturday, 30 May 2020

ক্রমসজ্জা


 

সমস্ত কবিতাই লেখা যায় না , সমস্ত বাক্য স্তবক হয় না । স্তবকের জন্য সমস্ত লেখা, শব্দ, বাক্য মিলে আমাদের ইতিহাসের পাতায় ফেলে দেখতে হয় । অন্তত: এই ২০২০ তে বসে যদি দেখি, আমাদের মানব সভ্যতার ও সাহিত্যের একটা ইতিহাস তো আছেই । এবং নিশ্চিত একটা ভবিষ্যৎ ও আছে । আর একটা সময় রেখা যখন আমরা এঁকে ফেলেছি, একটা রেখাকে কেন্দ্র করে তার বাম পাশে ও ডান পাশে কিছু থাকবেই । অর্থাৎ, জিরো জিরো থেকে, আমরা যদি গণনা করি- ১,২,৩,৪,৫...অবধারিত ভাবে সেটা এক সময় ৯,১০,১১,১২ র দিকে যাবে । সুতরাং এটা বলা যায়, একটা ইতিহাস থাকলে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ কিছুটা আন্দাজ করা যায় । যে ভাবে ১০ ১১ কে সংজ্ঞা প্রদান করে ১ ও ২ ও দশমিক ক্রমাংক – এই ভাবেই বাক্য, শব্দ, পঙক্তি গড়ে তোলে কবিতার অবয়ব ।

এই বার আর একটি সিরিজ দেখি, ১,৩,৫,৭,?  অথবা ক, খ, চ, ছ, ট, ঠ, ত, ? ।

জিজ্ঞাসা চিহ্নে একটি সংখ্যা বা অক্ষর বসবে । এই সিরিজে পরিষ্কার ভাবে, একটা সংখ্যা মিসিং আছে । উত্তর হিসাবে বলা যায়: জিজ্ঞাসা চিহ্নে যথাক্রমে ‘৮’ ও ‘থ’ বসবে । 

পরের সিরিজটাতে একটা বর্গকে স্কিপ করা হলো । তবুকি আন্দাজ করা কঠিন ? এগুলো আন্তর্সজ্জাকে অবয়ব দিচ্ছে । অর্থাৎ আমাদের  শিক্ষাকে একটা রূপ দিচ্ছে । যে রূপটা আদতে ছিলো না । যে প্যাটার্ন কোনদিন লিখে ফেলা হয় নাই । অথচ তা আমাদের জানা শব্দ বা জানা অক্ষর দিয়েই তা সাজানো । অথচ আমরা বলছি যে জিনিস আমরা দেখি নাই, শুনি নাই, পড়ি নাই, তা আছে । তার অবয়ব ধরা দরকার, তাকে লিখে ফেলা দরকার ।

এই বার আর একটা সিরিজ নেওয়া যাক, ১,৪,৯,১৬,২৫,? ক, খা, গি, ঘী , চু, ছূ , জে ? । উত্তর দিন। জিজ্ঞাসা চিহ্নে কি হবে ?

উত্তর: যথাক্রমে ৩৬ ও ঝৈ । সংখ্যাকে বর্গ করে সিরিজটা গঠন করা হয়েছে । আর অক্ষর বিন্যাসে ব্যঞ্জন বর্ণের বর্গের অক্ষরকে বাড়তে দেওয়া হয়েছে যেখানে স্বর মাত্রাকে একক ভাবে বাড়ানো হয়েছে ।

 

এই বার আর একটা সিরিজ নেওয়া যাক, ১,৫,২,১০,৩,১৫,৪,২০,৫, ? কাল, খাল, গাল, ঘাল, চাল, ছাল, জাল, ?।  উত্তর দিন। জিজ্ঞাসা চিহ্নে কি হবে ?

উত্তর: যথাক্রমে ২৫ ও ঝাল । অল্টারনেট সংখ্যাকে এরিথমেটিক প্রোগ্রেশনের ভিতর দিয়ে যাচ্ছে । ১,২,৩ বাড়ছে । ৫,১০,১৫ বাড়ছে । তারা অল্টারনেটিভ । এবং শব্দক্রমে ‘ল’ অক্ষরটি বারবার আসছে । এবং সিরিজটি ‘বর্গে’ থাকা অক্ষরগুলি নিয়ে ক্রমানুসারে সাজানো হয়েছে ।

এই বার আর একটা সিরিজ নেওয়া যাক, ৫, ৭৫, ২৫, ৯৫, ২২৫, ৪৪৫, ১৫ ? কাক, শালিক, টিয়া, ময়না, বক, ?।  উত্তর দিন। জিজ্ঞাসা চিহ্নে কি হবে ?

উত্তর: যথাক্রমে ৩৫ ও চড়ুই । এই উত্তরে এই বার একটু হিউম্যান টাচ দরকার । সমস্তটাই গণিত নয় । এইখানে শৈশব থেকে শিখে আসা নানান রান্ডম লার্নিং ও কগনিটিভ প্রয়োগ করা হয়েছে । সিরিজটি ক্রমানুসারে নয় । এইখানে আমরা ‘ক্রম’ অরিয়েন্টেশনের সংজ্ঞা অতিক্রম করলাম । দেখতে পাচ্ছি, প্রত্যেকটি নাম্বারের শেষে একটি ‘৫’ আছে । সুতরাং যে কোন নাম্বার যার পিছনে ‘৫’ আছে , সেইটাই হতে পারে উত্তর । ৩৫ প্রথম এমন সংখ্যা যা আমার মনে এলো । সেই ভাবে, শব্দগুলি যদি দেখি- এগুলি এক একটি পাখির নাম । সুতরাং যে পাখিটির নাম প্রথম আমার মনে এসেছে, সেটাই উত্তর । যদি কেউ উত্তর দেন ৪৫ ও চিল । উত্তর বেঠিক হয় না । একটি প্রশ্নের একাধিক উত্তর থাকতে পারে । এবং সেই উত্তর দেবার দায় কোন কবিই নিচ্ছেন না । বরং এমন একটি ধারনা রয়েছে, কবিতা ব্যাখ্যা করাই যাবে না, কবির নিজের কবিতার অর্থ বুঝিয়ে দেবার দায় নেই ।

আর একটা সিরিজ নিচ্ছি । ০, ১১৯১, ১৫২৬, ১৫৫৬, ১৭৫৭, ১৮৫৭, ১৯৪৭, ১৯৭১ । নাম্বারগুলি শুধু নাম্বার নয় , সঙ্গে ইতিহাস মেলান । শিক্ষা মেলান । হিউম্যান টাচ । স্বাধীনতার একটা স্বাদ পাবেন, আমি এখানে ব্যাখ্যা দিচ্ছি না ।

এই তো আন্দাজ করা যাচ্ছে...বরং আন্দাজ একটা বিশ্বাসে পরিণত হচ্ছে । আর প্রত্যেকটি বিশ্বাস করুন একটা কবিতার একক । কবিতার প্রত্যেক পঙক্তি, শব্দ একটি সিরিজের একক । যা আমাদের জানা অথবা জানা নেই । তবে আন্দাজ করা যায় । প্রত্যেক জানার মাঝখানে অস্থায়ী অজানা র‍্যান্ডম । কোন সিরিজ পরিণত, কোনটা পরিণত নয় । পরিণত সিরিজের র‍্যান্ডোমাইজেশন থেকে এটা শিক্ষা নেওয়া যায় যে, সিরিজ যে কোন শব্দ থেকেই হতে পারে । আগামীতে সিরিজ নিয়ে একটি পূর্ণ রচনা লেখা যেতে পারে ।

পংক্তিময় বাক্য ছন্দোবদ্ধ হয়, গল্প কাহিনী পয়ার বদ্ধ হয় । বোধশক্তি বলে, এই তো একে চন্দ্র, এই তো দুয়ে পক্ষ , তিনে নেত্র...কখন জানি শৈশব পার হয়ে কমলিকা কিশোরী হয়েছে, তার বৃন্তে ফুটেছে দুটি কুসুম । কবিতার জীবন চক্রে তা প্রাচীন সন্ধ্যাভাষা, ছন্দময় পয়ার, গীতিকবিতা পার করে তা একদিন অজান্তেই শাশ্বত ক্লাসিক যুগসন্ধি পার হয়ে বিষয় বিবেচনায় আধুনিক হয়ে উঠেছে । বিজ্ঞরা তাদেরকে পার করে উত্তরআধুনিক কবিতাও বলে থাকেন । যুগ পালটে যাচ্ছে, মানুষের ভাষা, চরিত্র, টেকনোলোজি, ঘর, মনস্তত্ব পালটে যাচ্ছে । আধুনিক থেকে অধিকআধুনিক হয়ে মানুষ এখন টেক্সট বেসড ভাষা থেকে নন-টেক্সট ভাষায় কথা বলছে । তার পরেও নিজেদের প্যাটার্ন খুঁজে পাচ্ছে । এ এক অত্যাধুনিক ভাবনা পরিসর । লিখিত, অলিখিত যা কিছু লেখা হচ্ছে, তা অত্যাধুনিক ।         


No comments:

Post a Comment