এই যে মাথায় ছাতা তুলে তেঁতুল গাছটা দাঁড়িয়ে আছে, কমলিকা দেখেন ওই গ্রামের দূরগামী
পথের পাশে একাকী ঠাই দাঁড়িয়ে । তাকে জিজ্ঞাসা করেন, কতবছর এভাবে দাঁড়িয়ে আছো? কমলিকা
দেখেন, তেঁতুল গাছটিকে, জন্ম থেকেই একা । গ্রামের
পথে, যেখান দিয়ে হেঁটে যায় গ্রামের কৃষক, গাড়োয়ালের গরু, গাড়ি । পুকুরের পাশদিয়ে রাস্তাটি
চলে যায় । ধানক্ষেত দুপাশে দুলে ওঠে মনোরম মলয় অভিলাষে । তার পিতা অবনী প্রামাণিক একজন
কৃষক । কন্যার জন্য পিতার হৃদয়ে অগাধ স্নেহ । একদিন রাত্রে খুব ঝড় বৃষ্টি । গ্রামে
এমনিতেও বিজলি নাই । অন্ধকার রাত্রি । কেউ যেন মনে হলো দুয়ারে কড়া নাড়ে । একি, এতো
মনোহর প্রামাণিক । কমলিকার ছোট কাকা । দুই বাড়ি পরেই থাকেন । চেহারা দেখে মনে হয়, চিন্তিত
। কি ব্যাপার ? কি হলো ? মনোহর বললেন, গোয়ালে ধবলীকে দেখা যাচ্ছে না । ধবলী, মানে দুধ-ধবধবে
গাভী । কোথায় গেলো ? বিদ্যুৎ চমকায়, আঙ্গিনা চমকে যায়, রান্না ঘর, শোবার ঘর, গোয়াল
দেখা যায় । ধবলী নাই । মনোহর বিপত্নীক । একা থাকেন। স্ত্রী সম্প্রতি গত হয়েছেন । ধবলীকে নিয়ে তার দিন কাটে
। গোয়ালে ধবলীও একা । একটা বাছুর হয়েছিলো, মারা গেছে । মনোহরের সর্বক্ষণের সাহারা হলো
ধবলী । ব্যথার মাঝে যা কিছু সাদা ধবধবে দেখেন , মনোহর তাকেই ধবলী বলে ঠাউরে নেন ।
‘মনোহর – যা, ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড় । সকালে
উঠে দেখিস, ধবলী গোয়ালেই আছে’ । কমলিকার পিতা বলেন । মনোহরের মন মানে না । তার বুকে
ব্যথা চিন চিন করে ওঠে । সে পুকুরের পাশ দিয়ে অন্ধকারে বৃষ্টি মাথায় বাড়ি ফেরে। সহসা,
আবার বিদ্যুৎ চমকায়, সে দেখে তেঁতুল গাছটার নিচে ধবলী বৃষ্টি পড়া আকাশের দিকে গায়ে
গা মিশিয়ে আধেক লীন হৃদয়ে একা দাঁড়িয়ে আছে ।
No comments:
Post a Comment