Saturday, 30 May 2020

অভিমুখ


গল্পটি, একা একটি তেঁতুল গাছের । যার রাত কাটে না । সে সঙ্গী খোঁজেন । মনোহর, সেও একা । কিন্তু সে মানুষ । তাকে বুঝতে দিতে নেই যে সে একা । ধবলী কি তা বোঝে ? সে কি তবে একা নয় ?

এবার এই গল্পটি, হাইপোথিসিসের আকারে রি-রাইট করা যাক । মনোহর ও তেঁতুল গাছটি বাদ দিলে , গল্পটি গল্প থাকে না । কিছু শব্দ যদিও পড়ে থাকে । কমলিকা, অবনী দুজনই হিউম্যান ক্যারেক্টার । ধরা যাক, অনেক রাতে আবার দুয়ারে কড়া নাড়া হলো । এইবার অরিয়েন্টেশন দেখা যাক । কিভাবে কি কি বাক্য, পদ, বিরাম, কী কী বিচ্ছুরণ করে । শ্রোডিঞ্জারের বিড়াল ওত পেতে থাকে । যে কোন জীবন মৃত্যুর মাঝখানে – ভাবনা, অভাবনার মাঝখানে পাঁচটি পদ কারক বিভক্তিতে একজন বিড়াল হয়ে ওঠে । প্রত্যেকটি পার্ট অব স্পীচ নেটওয়ার্কের একটি নোড বা ব্যস্ত পাঁচ মাথার মোড় । মোড় থেকে যে কোনদিকেই যাওয়া যায় । গল্পটি থেকে যদি তিনটে শব্দ বেঁছে নেওয়া যায় । “অবনী”, “বাড়ি”, “আছো” । শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতাটার কথা মনে পড়ে কিনা ? আরও কিছু শব্দ, ধ্বনি, অনুষঙ্গ নিয়ে দেখা যাক কি দাঁড়ায় । “দুয়ার” শব্দটি নিয়ে একটি অনুষঙ্গ ক্রিয়াপদ “এঁটে” শব্দটি যদি যোগ করি, “ঘুমিয়ে”, “পাড়া” শব্দ-বন্ধ নিয়ে এমন একটা লাইন লেখা যেতেই পারে । “দুয়ার এঁটে ঘুমিয়ে আছে পাড়া” । রাতে মনোহর যখন হন্তদন্ত হয়ে এলেন, দুয়ারে কড়া নাড়লেন, সেই ভাবে আর একটি বাক্য বিচ্ছুরণ হতেই পারে “কেবল শুনি রাতের কড়া নাড়া” । আরে বাহ । এতো দেখি, ব্যক্তিগত বোধকে জাগিয়ে তুলছে কিছু বাক্যবিচ্ছুরণ । মৃত্যু চিন্তা গ্রাস করে রাখে সমস্ত জীবন কে, সেখানে কবিও জীবন্ত মানুষ । একজন ওরিয়েন্টেড বোধপ্রাপ্ত মানুষ । তার মৃত্যু চিন্তায় কেবলই মনে হয় কেউ যেন ওপার থেকে ডাকছে, আয়, আয় । চিতা কাঠ ডাকছে । আয় চলে আয় । কবিও নিজেও যেতে চান, কিন্তু এখুনি নয় । তার সংসার, ঘর, বাড়ি, পুত্র কন্যা তাকে বেঁধে রাখে, কবি তার সন্তানের মুখ ধরে একটা চুমু খেতে চান । সেই তো ভয়, অবনীর সেই ভয় । ভয়কে জাগিয়ে তোলে অনুষঙ্গ, অনুষঙ্গ ট্রিগার হয় । প্রত্যেক পার্ট অব স্পিচেই তা হতে পারে । পুনঃ-লিখিত হাইপোথিসিসটা কেমন হলো তাহলে দেখা যাক:      

 

“অবনী, বাড়ি আছো?” দুয়ার এঁটে ঘুমিয়ে আছে পাড়া /কেবল শুনি রাতের কড়া নাড়া / ‘অবনী, বাড়ি আছো?’ / বৃষ্টি পড়ে এখানে বারো মাস / এখানে মেঘ গাভীর মতো চরে / পরাঙ্মুখ সবুজ নালিঘাস / দুয়ার চেপে ধরে / ‘অবনী, বাড়ি আছো?’ / আধেকলীন হৃদয়ে দূরগামী / ব্যথার মাঝে ঘুমিয়ে পড়ি আমি / সহসা শুনি রাতের কড়া নাড়া / ‘অবনী, বাড়ি আছো?’ 


No comments:

Post a Comment