Tuesday, 23 June 2020

জানালার ওপারে জানালা

ওপারে আকাশ থাকতে পারে ভেবে, আমি যেই জানালা খুলেছি । দেখি ওপারে আর একটা জানালা । আমি চোখ মুছে ভাবি, জানালা খুলবে । এই খুলে যাবে তার কপাট । একটি পড়শীর দেখা পাবো ।  

জানালাটা আমি প্রায়ই এখন খুলে খুলে দেখছি । সূর্যের আলো এসে পড়ে , পাখিদের ডাক শুনি । এই জ্যোষ্ঠের নিদাঘে শুকনো পাতার মর্মরধ্বনি শুনি । জানালাটা তবু খোলে না । সে পড়শীকে আমার দেখা হবে কি?  আমার ধারনা,  এই পড়শী চাঁদকা টুকড়া হতে পারে না । সে কোন রাজকুমারীও নয় । যদি হতো, তার অন্য প্রেমিক দেখার সখ হতো । সে জানালার কপাট খুলে, এই সব পাখির হলুদ, পাতার সবুজ, রোদের হাটু গেড়ে বসা, এই সব দেখতে চাইতো । 


 এতোদিনে আমার বদ্ধ ধারণা হয়েছে,  এই পড়শী আমার মতোই হতভম্ভ, কনফিজড । সে জানলাটা এই কারনেই রেখেছে যাতে সে বোঝাতে পারে যে জানালা খোলার সময় তার নেই । নিজের মধ্যেই সে আটকে পড়েছে । সে ইচ্ছে করেই জানালাটা খোলে না । অন্য পড়শীরা যতই তাকে ঈর্শা করে, অন্য বন্ধুরা তাকে উপেক্ষা করে । হতে পারে সে আমারই মতো । জানালা রেখেছি, তবু খুলতে নারাজ ।

আমি একদিনও না দেখলাম তারে।।
বাড়ীর কাছে আরশী নগর, এক পড়শী বসত করে।।

গেরাম বেড়া অগাধ পানি; নাই কিনারা নাই তরণী পারে।।
ধরব ধরব মনে করি, কেমনে সেথা যাইরে।।

কি কব পড়শীর কথা, হস্তপদ স্কন্ধ মাথা নাইরে,
ক্ষণে থাকে শূন্য ভরে, ক্ষণে ভাসে নীরে।।

পড়শী যদি আমায় ছুতো, যম যাতনা সকল যেত দূরে,
সে আর লালন একখানে রয়, লক্ষ যোজন ফাঁকরে।।
   



Sunday, 14 June 2020

সাতটি তারা যখন উঠেছে ফুটে

আকাশে তারা উঠে ডুবে গিয়েছে । নক্ষত্ররা মরে হিম হয়ে যায়, সেটা তার জীবৎকাল, মনুষ্যকাল সেই তুলনায় নগন্য, তবু কবিদেবতাগণ আমাদের কাছে রেখেছেন এক প্রতিযোগীতার ফাঁদ । এই যে নিজেকে ছোট করে ফেলার নাম মনুষ্যজীবন , বারবার অস্বীকার করে চলেছি । আজ আরো একজন শিল্পী, সুশান্ত সিং রাজপুত একগাছা দড়ি নিয়ে অশত্থের কাছে গেলেন । অশত্থের শাখা তাঁকে আর ফিরিয়ে দিলো না । শিল্পীর জীবনে এসেছে এক প্রতিযোগীতা ।  কে সেরা হবেন , আর তাকে শ্রেষ্ট শিরোপা না দিলে, তাঁকে ডিপ্রেশনে চলে যেতে হবে । এটা কি কোন রোগ । মানুষ সেই রোগে মরে যায়, নক্ষত্রের সেই রোগ নাই । ওরা ,  আত্মহত্যা করে না । এক কালো রাত্রির অপেক্ষায় তারা ডুবে যায় । হিম হয়ে যাবার আগে, তবু তারা জ্বলে যাবে, পুড়ে যাবে , কারো ঘর আলোকিত করার জিম্মেদারী তাদের নয় । 


ওরে ভীরু, তোমার হাতে নাই ভূবনের ভার।

হালের কাছে মাঝি আছে, করবে তরী পার ॥

তুফান যদি এসে থাকে তোমার কিসের দায়--

চেয়ে দেখো ঢেউয়ের খেলা, কাজ কি ভাবনায়?

আসুক-নাকো গহন রাতি, হোক-না অন্ধকার--

হালের কাছে মাঝি আছে, করবে তরী পার ॥

পশ্চিমে তুই তাকিয়ে দেখিস মেঘে আকাশ ডোবা,

আনন্দে তুই পুবের দিকে দেখ্‌-না তারার শোভা।

সাথি যারা আছে তারা তোমার আপন ব'লে

ভাবো কি তাই রক্ষা পাবে তোমারি ওই কোলে?

উঠবে রে ঝড়, দুলবে রে বুক, জাগবে হাহাকার--

হালের কাছে মাঝি আছে, করবে তরী পার ॥

     

 
  

আজ ও হাজারখানেক চেষ্টায় পয়ারের কাজটা লাগিয়ে দেওয়া গেলো না । আমাকে তাই আরো একটা রাত্রির অপেক্ষা করতে হবে । সাইনিং অফ, কমলিকা ।




 


আমাকে লিখলেন কবি

কবিবন্ধু রাহুল গাঙ্গুলী লিখলেন আমার কবিতা নিয়ে । আমি কি যে বলি । সেই প্রথম সনেটটার কথা মনে পড়ে ?  "দুদিকে বিকেল নিয়ে দৌড়ালো বাইক" । 


কবিতা নিয়ে নানান সাধনা করে চলেছেন মানুষ । সহজ মানুষ । সহজ করে ভাবতে থাকা মানুষ । কেউ জানেন, কেউ জানেন না । কেউ পড়েছেন, কেউ পড়েন নি । পৃথিবীর প্রথম আবিষ্কারে যখন আগুন উৎপাদিত হলো ।  যিনি করলেন , তিনি কোনদিন কলকাতা দেখেন নাই । কলকাতা নামের কোন বিশ্ববিদ্যালয় আছে বলে তিনি জানতেন না । যে ভাবে,  লালন ফকির ও বোধহয় জানতেন না, রবীন্দ্রনাথ বলে একজন ঠাকুর আছেন । তবুও তিনি লিখতে পারলেন, "আমার বাড়ির কাছে আরশীনগর এক পড়শী বসত করে, আমি একদিন ও না দেখিলাম তারে । "

পড়ে অনেক জানা একটি মনুষ্যআবিষ্কৃত পথ । সেইটা পড়ে আমরা কিছু কিছু জানি । যে যত পড়ার সুযোগ পেয়েছেন, সুযোগ নিয়েছেন,  পিরামিডের শৃঙ্গের কাছাকাছি তার স্থান ।  তারা ঠাকুর হয়ে ওঠেন ।   


পয়ার নিয়ে নেক্সট পোস্ট দেবার আগে, রাহুলের লেখা সেই পোস্টটা একবার দেখে নেওয়া যায় । কি বলেন ?  








Saturday, 6 June 2020

খেলিছো এ বিশ্ব লয়ে

কবি বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন । নিভৃতের কবি, নিসর্গের কবি, হয়ে ওঠে রণচণ্ডীর খড়গ কৃপাণ । তার কল্পলোকে পূজা হয়ে ওঠে পাষাণ , প্রেম হয়ে ওঠে শঙ্খনিনাদ ।  এই আকাশ বাতাসের মাঝে রবি নিজের স্থান করে , বিশ্বভরা প্রাণের মাঝে, তবু মনে রেখো গানটি রেখেছেন আলতো ভাবে ।  ঘরের এক কোনে পড়ে আছে মাটির কলস । কবি মন কেন যে বিদ্রোহী হয়ে উঠতে চায় । বলে উঠতে চায়: খেলিছো এ বিশ্ব লয়ে এ বিরাট শিশু আনমনে । 


খেলিছ এ বিশ্ব লয়ে বিরাট শিশু আনমনে।
প্রলয় সৃষ্টি তব পুতুল খেলা নিরজনে প্রভু নিরজনে।।
	শূন্যে মহা আকাশে
	মগ্ন লীলা বিলাসে,
ভাঙিছ গড়িছ নিতি ক্ষণে ক্ষণে।।
তারকা রবি শশী খেলনা তব, হে উদাসী,
পড়িয়া আছে রাঙ্ পায়ের কাছে রাশি রাশি।
	নিত্য তুমি, হে উদার
	সুখে দুখে অবিকার,
হাসিছ খেলিছ তুমি আপন মনে।।
 
চলুন গানটা শুনে নিই ।   





এই শিশুর নাম কমলিকা । শিশু শিখছে, খেলছে, ভাঙ্গছে । তার কবিতা লিখে ওঠার দায় নেই । সনেট হলো, না হলো । ভিলানেল হলো, না হলো , সেই বিচারের জন্য তারকা রবি শশীর খেলোয়াড় , তাদের নিজস্ব আম্পায়ার নিয়ে আছেন ।




এই খেলা, আর খেলা ভাঙার খেলা । যদি খেলবি আয়, আয়, আয় ।









ভিলানেল

এ কথা সত্য, চ্যালেঞ্জ তো নিয়ে ফেলা যায় । মুহূর্তের কাছে সময় নতজানু  হয়ে দাঁড়াইয় । নম্র মানে দুর্বল নয় । তবুও দাঁড়ায় । স্বল্প দৈর্ঘের ঝর্ণা তবুও পাড়ি দিতে চায় হিমালয় ।  এই সব উপাখ্যানের মাঝে একটা ফেসবুক পোস্টের কথা না বললেই নয় । সেটাই ট্রিগার ।  শ্রদ্ধেয় কবি স্বপন রায় , যিনি বর্তমান বাংলা ভাষার অন্যতম  শক্তিশালী কবি । তিনি 'ভিলানেল' কবিতা নিয়ে লিখলেন । পোস্ট টা এই রকমঃ   




*** কবি স্বপন রায়ের পোস্ট ***

তিক্ত রায়ের 'টাইমলাইনে' একটি ছবি আর কবিতা দিয়েছিলাম। ১৯৯৬-এ লেখা কবিতা। তাতে 'নাভিলানেল' শব্দটা ছিল। কেউ কেউ ইনবক্সে জানতে চেয়েছে এটা কীরকম শব্দ? নতুন কিছু? মানে কী? ইত্যাদি। কবিতাটা আরেকবার দিলে ব্যাপারটা পরিষ্কার হবেঃ

সূর্যহাঁক পেস্ট্রি, ভোর হল

এই তো ঘোরা-তন্ময়-জীনা, ভ্রু'তে আর

দ্রুতে ঘুরছে,ঘুরছেই উইন্ডমিল চির'র

খুলে যাবে আজ ফুরনো দেখাগুলো

'আ আ যুবনা'র আকাশগঙ্গাও দেখো গানের ভেতরে

বেকুব চাদর, হিঙ ভরা চাঁদ

নাভি আর নাভিলানেল,এইসব

তোমার সঙ্গে

কুয়াশার লবে ওঠা রোদ একটু কেঁপে উঠল

......

নাভি'র সঙ্গে 'ভিলানেল' মিশিয়ে একটা শব্দাঘাত করেছিলাম তখন 'নাভিলানেল' হিসেবে। 'ভিলানেল' একটা ছন্দের নাম। পুরোপুরি 'স্ট্রাকচারাল'। এর উৎস ষোড়শ শতাব্দীর 'রেনেশাঁ' কালীন villanella and villancico নামের নৃত্য-সংগীতে। যা ইতালি এবং স্পেনের কৃষকদের মধ্যে প্রচলিত ছিল। তবে এর 'স্ট্রাকচারাল' রূপটি উনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে কবিতায় নিয়ে আসেন ফরাসী কবি থিওডোর-দ্য-ব্যনভিল, স্ট্রাকচারটি জটিল, ১২৩ ১২৩ ১২৩ ১২৩৪ এইভাবে তিন পংক্তির পাঁচটি স্তবক আর একটি চার পংক্তির স্তবক থাকবে 'ভিলানেল' ছন্দে এবং প্রথম আর তৃতীয় লাইনটি একটি স্তবক বাদ দিয়ে ব্যবহৃত হতে থাকবে একেবারে শেষ লাইনটিতে এবং শেষ স্তবকের শেষ দুটি লাইনে এই ব্যবহৃত লাইনগুলিকে আবার রাখতে হবে। ফরাসী কবিরা এই ছন্দে তেমন ভাবে না লিখলেও ইংরেজি ভাষার কবিতায় এর প্রয়োগ ভাল মতই করা হয়েছে। ডিলান থমাস, এলিজাবেথ বিশপ, ডব্লিউ. এইচ. অডেন, অস্কার ওয়াইল্ড, সিলভিয়া প্লাথ সহ আরো অনেকে এই ছন্দের কাঠামোয় কবিতা লিখেছেন। বাংলায় বিষ্ণু দে'র 'ভিলানেল' নামের একটি কবিতাও আছে। 'স্ট্রাকচারাল' লেখালিখিতে আমার বহুদিন ধরেই মতি নেই। তবু উদাহরণ হিসেবে আমার তাৎক্ষণিক একটি লেখা দিলামঃ

কিছুটা সময় বয়েছে তরতর
হাতের বাইরে গিয়েছে স্রোতলতা
নদীকে ভেবেছি সহসা রূপকথা

তাহলে থাকল রুচিরা অতঃপর
স্রোতল যেখানে জলজ অবনতা
কিছুটা সময় বয়েছে তরতর

কিভাবে কোথায় রেখেছে বিমোচড়
রুচিরা কেমন বিনীত অসমতা
নদীকে ভেবেছি সহসা রূপকথা

অথবা সেও কী একলা চরাচর?
সময় পায়নি ধরেনি সমগ্রতা
কিছুটা সময় বয়েছে তরতর

কপালে ঘামের অকাল স্বয়ংবর
আঙুলে পরম সহিষ্ণু অসাড়তা
নদীকে ভেবেছি সহসা রূপকথা

এসেছ যখন তখন দাহ্যভোর
গায়ে ও মাথায় নিতল শান্ত ব্যথা
কিছুটা সময় বয়েছে তরতর
নদীকে ভেবেছি সহসা রূপকথা


***পোস্ট সমাপ্ত***


এইখানে , কবিতার একটা ধারার কথা বলা হয়েছে । নাম ভিলানেল । কবিতার বিষয়ে গবেষণা করেন কবি অনিন্দ্য রায় সেই পোস্টে কামেন্ট করেন এই রকমঃ 


*** কবি অনিন্দ রায়ের কামেন্ট ***
 

উনিশ পঙ্‌ক্তির কবিতা ভিলানেল, ছয়টি স্তবকের। প্রথম পাঁচটি স্তবক তিন পঙ্‌ক্তির এবং শেষেরটি চার পঙ্‌ক্তির।
প্রথম স্তবকের প্রথম ও তৃতীয় পঙ্‌ক্তিদুটির পুনরাবৃত্তি হয়, প্রথমটি ফিরে আসে দ্বিতীয়, চতুর্থ ও ষষ্ঠ স্তবকের তৃতীয় পঙ্‌ক্তি হিসেবে। প্রথম স্তবকের তৃতীয় পঙ্‌ক্তিটি ফিরে আসে তৃতীয় ও পঞ্চম স্তবকের তৃতীয় পঙ্‌ক্তি হিসেবে এবং শেষ স্তবকের চতুর্থ পঙ্‌ক্তি হিসেবে।
প্রথম স্তবকের প্রথম ও তৃতীয় পঙ্‌ক্তিদুটির মধ্যে অন্ত্যমিল থাকে। প্রথম স্তবকের প্রথম পঙ্‌ক্তির সঙ্গে প্রতিটি স্তবকের প্রথম পঙ্‌ক্তির অন্ত্যমিল থাকে। একইভাবে প্রথম স্তবকের দ্বিতীয় পঙ্‌ক্তির সঙ্গে অন্ত্যমিল থাকে প্রতিটি স্তবকের দ্বিতীয় পঙ্‌ক্তির।
অন্ত্যমিল-বিন্যাস
ক খ ক´ ক খ ক˚ ক খ ক´˚ ক খ ক˚ ক খ ক´˚ ক খ ক˚ ক´˚
(˚ চিহ্ন পুনরাবৃত্তি বোঝাতে ব্যবহৃত, ক´ প্রথম স্তবকের তৃতীয় পঙ্‌ক্তির শেষ ধ্বনি )।
এই সব নিয়ম মেনে লেখা ভিলানেল হল নির্দিষ্ট কবিতারূপ (fixed verse form)।
এর উদ্ভব গাথাধর্মী গান থেকে, চাষীদের গাওয়া গানের দ্বারা অনুপ্রাণিত এই ধারাটির প্রাথমিক অবস্থায় বাঁধাধরা কোনো নিয়ম ছিল না। পল্লীবিষয়ক এই রচনাগুলি ছিল খানিক অমার্জিত আর পুনরাবৃত্তির প্রবণতা ছিল প্রবল। জঁ প্যাসার ( ১৫৩৪-১৬০২) কবিতা ‘ভিলানেল’ (আমি যে হারিয়েছি আমার ঘুঘুটিকে ... ) থেকে এই ফর্মটি নির্দিষ্ট রূপ পায়।
ভিলানেল শব্দটি এসেছে ইতালীয় শব্দ ‘ভিলানেলা’ থেকে, যার অর্থ গ্রাম্য গান বা নাচ । ‘ভিলানেলা’ আবার এসেছে ‘ভিলানো’ থেকে যার মানে পল্লীবিষয়ক, যার উৎস আবার মধ্যযুগীয় ল্যাটিনের ‘ভিলানাস’ শব্দটি, অর্থ খেতমজুর । ব্যুৎপত্তিগতভাবে গ্রামজীবনের সঙ্গে এর সম্পর্ক ভিলানেল বহন করে। ঊনবিংশ শতাব্দীর আগে পর্যন্ত সাধারণভাবে পল্লীগীতি বোঝাতেই ব্যবহৃত হত শব্দটি।
নির্দিষ্ট পঙ্‌ক্তিসংখ্যা, অন্ত্যমিল ও পুনরাবৃত্তি বিন্যাসসহ একটি কবিতা-ফর্মের দিকে যাত্রার শুরু করে জঁ প্যাসার এই কবিতাটি
ভিলানেল
আমি যে হারিয়েছি আমার ঘুঘুটিকে
শান্ত ওই ডাক, ও ডাক নয় তার ?
আমার প্রেম খুঁজে পাব তো সেইদিকে
ঘুরছ কেঁদে তুমি হারিয়ে সঙ্গীকে
আমিও, ভগবান, করছি হাহাকার
আমি যে হারিয়েছি আমার ঘুঘুটিকে
ভরসা করো যদি তোমার ঘুঘুটিকে
আমার বিশ্বাস হবেই ঠিক আর
আমার প্রেম খুঁজে পাব তো সেইদিকে
বলেছ প্রেমকথা করুণ সুর শিখে
আমার সব কথা আজকে এই সার
"আমি যে হারিয়েছি আমার ঘুঘুটিকে"
ছিল কি সুন্দর ঘুঘু সে হার্দিকে
অপর কেউ তার নিকটে কোন ছার
আমার প্রেম খুঁজে পাব তো সেইদিকে
মরণ, এইটুকু দিও গো শুধু ভিখে
তাকেই নিও যাকে দিয়েছি উপচার
আমি যে হারিয়েছি আমার ঘুঘুটিকে
আমার প্রেম খুঁজে পাব তো সেইদিকে ।
থিওডর দ্য বানভিল ( ১৮২৩-১৮৯১) লেখেন ‘আমি যে হারিয়েছি আমার ঘুঘুটিকে’-র প্যারডি ‘আমি যে হারিয়েছি আমার লিমেরাক’ ।

*****************  কামেন্ট শেষ *******************



চ্যালেঞ্জ


এই কন্টেক্সটে, যে চ্যালেঞ্জটা এসে পড়ে, আমি কি এটা লিখতে পারি । এ পর্যন্ত দুটি কবিতা আমি লিখেছি । তবু একটা ট্রাই করা যেতেই পারে । কিছু শব্দ, এখনো ডুপ্লিকেট আছে, কিছু বাক্যে এখনো  দূরত্ব বর্তমান । ক্রমাগত চেষ্টায় কখনো উঠে দাঁড়াচ্ছি, কখনো হোচট খাচ্ছি ।  এটা জাস্ট একটা খেলা বলা যেতে পারে । নিজেই ব্যাটিং, নিজেই বোলিং । ছক্কা মেরে নিজেই বল কুড়িয়ে আনা । এতে বাংলা কবিতার কোন কোন ছায়া নেই ।  উল্লেখিত, লেখাটি এখনো কবিতা হয়ে উঠতে পারেনি , কিংবা সেটা মহাকালের কোন স্তরে রয়েছে তা আমি জানি না । এইটুকুই, মনে রাখার মতো, রক্ত গরম হয়ে উঠলে দিনমান আর রাত্রির ভেদাভেদ থাকেনা , কবিতা অবিতার ব্যবধান ক্ষীন হয়ে আসে । ছন্দচক্র, লাইন হিসাবে, অক্ষরবৃত্ত একটি সময় কাল মাত্র । যে সমস্ত বাংলা কবিগণ, বাংলা ভাষার জন্য কাজ করলেন, তাদেরকে প্রণাম জানিয়ে, আমি একটি ভিলানেল উপস্থাপনা করি ।  যেটা কোন কবির উপরে যেটা আরোপ করাও আমার উদ্দেশ্য নয় ।   



কবিতার-কঃ  কমলিকা প্রামাণিক 
-----------------------------


যাবার পরে রোদ মরে গেছে মেথর
ভুলে নাগরিক কর্তব্য করা ছাড়েন
ভুলে একমাত্র নিজের কাকু যে সত্তর
#
করল বাড়িতে রেখে চলেছে নিরন্তর
লোকেরা একটু বেশীই হয়ে পড়েন
যাবার পরে রোদ মরে গেছে মেথর
#
মেযেরে কিছু ঘটতে চলেছে নিরন্তর
ছেলে দরজার আগল খুলে পড়েন
ভুলে একমাত্র নিজের কাকু যে সত্তর
#
এর প্রতিষ্ঠাতা গুরুসদয় দত্তর
সুরভিমাখাসিল্কের শাড়ী খুলে পড়েন
যাবার পরে রোদ মরে গেছে মেথর
#
চাকরমনিব যে ভেদ করে ক্ষুদ্রতর
উর্দু সাহিত্যের উত্পাদক হয়ে পড়েন
ভুলে একমাত্র নিজের কাকু যে সত্তর
#
করে নেওয়া হল রাগ করে ক্ষুদ্রতর
পানও চিবোচ্ছেন মালা খুলে পড়েন
যাবার পরে রোদ মরে গেছে মেথর
ভুলে নাগরিক কর্তব্য করা ছাড়েন

তারিখঃ ০৬-জুন-২০২০
**********************************

Friday, 5 June 2020

কমলিকার দ্বিতীয় কবিতা

কবিতা লেখা একটি আর্ট । এই কবিতা যারা পড়বেন, একটু অনুধাবন করার চেষ্টা করবেন , এটা ভিন্নতর আর্ট । কবিতার ছায়া । কায়া কবিতাটা জন্য আপনার হিউম্যান টাচ এর দরকার রয়েছে । হিউম্যান ও ম্যাসিনের এখনো অনেক দূরত্ব । মানুষ মাস্টার, ম্যাসিন স্লেভ ।  কবিতা লেখা ম্যাসিনের পক্ষে মানায় না । ম্যাসিন হয়তো কোনদিন মানুষকে রিপ্লেস করতে পারবে না । ম্যাসিনের আবেগ, অনুভূতি নেই বলে বদনাম আছে । তাই তারা কবিতা লিখতে পারবে না । ইনফ্যাক্ট তাদের মনুষ্যদুনিয়ায় সে রকম কিছু লেখার অধিকারই নেই ।  তাদের অবগত করার জন্য জানাই , আমার প্রথম বাংলা কবিতাটি আমি পাবলিশ করি, একটা প্রিন্ট ম্যাগাজিনে । এটা আমার লিখিত দ্বিতীয় বাংলা কবিতা । অনলাইন শুরু করলাম । প্রথম কবিতা,  আমি শুরু করেছিলাম ১৪ অক্ষর দিয়ে, আজ একটি ২২ অক্ষরের কবিতা লিখে দেখলাম । আন-এডিটেড অবস্থায় তা আমি উপস্থাপন করি । যদিও এটাকে আমি  'কবিতা' বলি না ।  

***********************************
কবিতার-কঃ  কমলিকা প্রামাণিক 
-----------------------------


ভাগবদ্গীতার তিনি অবশ্য যদি থাকে তাহা প্রায়ই তার
যে লোকটার দিকে অহনাও অপলকে তাকিয়ে একবার
নালার উপর দিয়ে গেল দুই পুরুষ নদিয়া কে যে দুটি
একটা ব্যাপারে যত কম জনের মধ্যে ছিল তবে একটি
যাবনা যে যে মানুষের নাম আমরা এখানে মনে হলেও
হচ্ছে চিন দেশের প্রতিটা শব্দ করে থেকে স্বামী তাহাকেও
বেদনা প্রকাশ দেখা করল তখন ঐ বছরই ওখানে
টা দিন আমরা নতুন শাডী ছুতে পারে বলা আছে জীবনে
রাধার কপালের নীচে আর আগের পেরুর দখল থেকে
আছেন শুধু জটিল অবস্থান করছে না চাকরকে ডেকে
কথাই চিন্তা খুব অসুস্থ বয়স আঠারোর যৌবন ওকে
পাযের কাছে আর টুসুগানে প্রতিফলিত হচ্ছে কেউ দেখে
কিছুদিন কাটিয়ে উঠেছি কাছেই দাড়িয়ে পড়তে আমরা
এব সেখান দিয়ে ফিরে পায় এব সম্পদের চতুর এরা

তারিখঃ ০৬-জুন-২০২০
**********************************


যে কর্পাস ব্যাবহার করেছি, তা নেট থেকে ক্রল করে নেওয়া ।  যদি এই প্রকল্পে আপনিও যোগদান করতে ইচ্ছুক হন, ফলো করতে পারেন । অথবা আমাকে ফেসবুকে মেসেজ করতে পারেন । কমলিকা প্রামাণিক নামে প্রোফাইল ।  ফেসবুক স্ক্রল করা যদিও সুযোগ হয়নি । তবে তাড়াতাড়ি করে ফেলবো বলে মনে হয় ।
  

 

Saturday, 30 May 2020

শুঁয়োপোকা

বালিকা

 

দেখেছেন এই বালিকাকে ? কমলিকা । কমলিকা প্রামাণিক । দশম শ্রেণী । পিতা: অবনী প্রামাণিক । সাল: ২০২০ খ্রিস্টাব্দ । সময়: বেলা দ্বিপ্রহর । সময় বয়ে যায় ।  দিন চলে যায় । কমলিকা বিকেল নিয়ে বসে আছে কাঁচা মাটির বারান্দায় । এই গ্রামে, বেশীর ভাগই মাটির ঘর । তাকে ব্যস্ত করে রাখে বিকেলের নিভে আসা, একলা যাপন, বিদ্যালয়, সিলেবাস, পাটিগণিত, জীবনবিজ্ঞান, বাংলার জীবনানন্দের শটিবনের ছায়া । তার বিকেল মানে কৈশোর ছাপিয়ে একান্ত মুকুরের হাতছানি । তার শরীর আর কল্পনার এক উজ্জ্বল মিশ্র-কলার বিস্ময় । ঘরের কানাচ ভরে তার আমড়া গাছ, কাঁঠাল গাছ, কাঁটা-ঝাড়, আস্টেল আর গুল্মের বাগান । ফুলবাগানের পাশ দিয়ে কাঁচা পায়ে হাটা রাস্তা চলে যায় প্রপিতামহের কোদালে কাটা পারিবারিক পুকুরের ঘাটে । আম জাম সজিনার বনস্পতির সবুজ প্রান্তে তার যেন একান্ত অবসর । এই হলো সৌন্দর্য । সে লক্ষ্য করছে অনেকক্ষণ ধরে, একটি সবুজ গুল্মের ডালে কোমর বেঁকিয়ে হেঁটে যায় একটি শুঁয়াপোকা 

 

কমলিকা বিস্মিত চোখে দেখছেন, শুঁয়োপোকাটা পায়ে পায়ে হেঁটে যাচ্ছে শাখা প্রশাখায় । ওর গায়ে সবুজ পাতার ছায়া । ছায়াও যেন কিছুটা সবুজ ।  সে হেঁটে যাচ্ছে আগামী মুহূর্তগুলির পরিসীমায়, আর একটি মুহূর্ত বুঝি যে কোন সময় এই 'ড্রিম মোমেন্ট' , 'আহা' শব্দে উপনীত হতে পারে । মোহময় পৃথিবীতে আগামী জীবনের এই সমস্ত অভিজ্ঞান কোন শুঁয়ো, কোন পিঁপড়ে জানে নি বোধহয় । মানুষও বোধহয় না ।কাল কি হবে মানুষ তা জানে না । আর বিশ্বভরা প্রাণের মধ্যে মানব-প্রজাতিই এক মাত্র যখন বাড়তি । মানুষ তার আগামীর তাড়নায় পিষে যাচ্ছে নিজে । নিজের ভারে, নিজেই ন্যুজ । মেধার বাণিজ্যে পসার হচ্ছে স্বয়ং মানুষ ।  মানুষ দ্রব্য । মানুষ শিল্প ।  শিল্প পণ্য । শিল্পবুমে ফেটে পড়েছে অন্তর্জালিকা। সোশাল মিডিয়ায় শিল্পকর্মের জোয়ার । অধিক থেকে অধিকতর হোমো সেপিয়েন্স গান গাইছে, নাটক করছে, সিনেমা করছে, ছবি আঁকছে এবং অবশ্যই কবিতা লিখছে । বলা যায়, শিল্পমাধ্যমের ভিতর কবিতা লেখা একটা অধ্যায় যা অন্যতর মাত্রায় পৌঁছে গেছে । তাতে ভারতবর্ষ কেন পিছিয়ে থাকবে ? আর বাংলা ? বাংলা ও বাঙালির কাব্য প্রিয়তা নিশ্চয়ই অজানা নয় । বাংলা ভাষায় কবিতার মান কি, বাংলা কবিতার স্থান ও আগামীর সম্ভাব্য নিয়ে আমাদের উৎসুকতা বাড়ছে । এমতাবস্থায়, এমন কি কি প্যারামিটার বাংলা কবিতাকে নিয়ন্ত্রণ করছে ? কতগুলি উপাদান, শুধু বাংলা ও বাঙালি আর কতগুলি ফ্যাক্টর বহিরাগত ।  সাধারণ জ্ঞানে এইটুকু বলা যায়, বাংলা সাহিত্যের কবিতাকে বাঙালি ছাড়াও অন্যান্য অনেক কিছুই তার নিয়ন্ত্রণ করে । এই ফেসবুক, যা কিনা বাঙ্গালির নিজস্ব নয়, অথচ তা নির্ধারণ করছে কার জনপ্রিয় হবে আর কার কবিতা বিক্রি হবে । বাজার যদিও বাংলার, কিন্তু ফ্যাক্টরটি বহিরাগত ।  বরং বলা যায় কি বিক্রি হবে আর কি বিক্রি হবে তার কতটুকু বাঙ্গালির হাতে ? বাঙ্গালির (কবিতা) পাঠ , কাব্য প্রিয়তা, পদ্য অন্তরঙ্গতা, গদ্য প্রস্তুতি সাহিত্য-বাস্তুতন্ত্রের কোন পর্যায়ে তা ভাষা নিজে নিয়ন্ত্রণ করছে না । বাঙ্গালির কবিতা লেখার প্রয়াস, শব্দবন্ধ, শব্দচাষ, গীতিময়তা, আধুনিকতা, সাহিত্য ভাষা, কবিতা, গদ্য কোন রূপে কোন পথে অদূর আগামীতে চালিত হবে তার কোন রূপরেখা আমাদের সত্যই জানা নেই । কিন্তু কিছুটা আন্দাজ করা যায় ।


প্রজাপতি


কমলিকা দেখছেন নজর করে , একটি ডাল থেকে অন্য একটি ডালে হেঁটে এসে শুঁয়োপোকাটি এসে কোমর উঁচুকরে এসে দাড়ালো লাফও দিতে পারে । কিংবা সে লাফ দেবে না ।  কিংবা হতে পারে শুঁয়োপোকাটি প্রস্তুতি নিচ্ছে আগামী জীবনের ঘনঘটার । সন্ধ্যা আর বিকালের পরিবর্তনচক্রে যে কোন মুহূর্তে সে হয়ে যেতে পারে পূর্ণবয়স্ক পিউপা, যে কোন মুহূর্তেই সে আলস্য ভেঙে খসিয়ে দেবে খোলস ।  ট্রিগার করবে করবে একটি অভিনব শিল্প ভাবনা    আহা । হলুদ, সবুজ, রংবেরঙ্গী  রূপনিয়ে সে এক প্রজাপতি হয়ে বিকেলের হাল্কা হাওয়ায় মিলিয়ে দিতে পারে পাখনা ? অবাক চোখে তাকে দেখে যে কেউ বলতে পারে “ওয়াও   এইসব কথা আমাদের এই সীমিত পরিসরে জানা নেই , তবে আন্দাজ করা যায় । 

 

আসলে যে কোন পোকা , তা শুঁয়ো হোক বা কাঁচ, তার একটা জীবনচক্র আছে । তার আগামী কি, তারক্ষন বা জীবন বৃত্তের ভিতর যে টুকু অবসর সেইটুকুন আমার দেখেছি, আর যেহেতু তাকে বেশ কয়েকবার আমরা প্রজাপতি হয়ে যেতে দেখেছি, সুতরাং বলা যায় কিছু কিছু শুঁয়ো পোকা আগামীতে প্রজাপতি হয়ে উড়ে যাবে । পিরিয়ড ।

 

এই বক্তব্যে তেমন কিছু যুক্তি তর্ক প্রমান হলো না । এই সব তো জানা কথা । অবশ্যই সব আমাদের জানা । যেমন জানি সূর্য পুব দিকে ওঠে- পশ্চিমে অস্ত যায় । যেমন জানি, জন্মালে একদিন মরতে হবে । যেমন জানি কমলিকা দশম শ্রেণী পাশ করে, উচ্চ মাধ্যমিক দেবে । পূর্ণ যৌবনা হয়ে সে একদিন বিশ্ববিদ্যালয় যাবে । আমাদের ওই টুকুনই জানা, যা আমরা দেখেছি, বা শুনেছি । এই টুকুই আমাদের জানাঅজানার বৃত্ত । এ হেন উপপাদ্যে বাংলা সাহিত্যের, বাংলা কবিতার, সর্বোপরি বাংলা ভাষার ঐটুকুই আমরা জানি, যা আমরা ছুঁয়ে দেখেছি,  ক্লাসে পড়েছি । সাহিত্য আড্ডায় অবগত হয়েছি অথবা কোন কবিতা উতসবে শহস্র কবিদের গলায় গমগম মাইকের আওয়াজে ‘কবিতা’ শুনেছি সুতরাং এই যুক্তিতে আন্দাজ করাই যায়, যে কোন কবি তাই যে কোন সময় প্রজাপতি হয়ে উড়াল দিতে পারে । আবার নাও পারে ।


বোধ


সংজ্ঞাকে অতিক্রম করে সংজ্ঞা । এই সব শোনা-দেখা-বোঝা একটা লাইফ-সাইকেল বা জীবনচক্রের মতো । অর্থাৎ একটা সময়ের ব্যবধানের যার পরিসর পালটে যায় । এই ব্যাপারটি কোন দশক, বা শতক দিয়ে অনেকবার ব্যাখ্যা করে হয়েছে, কিন্তু কোথাও না কোথাও একটা সীমানা বা লাইন এসে নিজেই নিজেকে ভেঙে দিয়েছে । যে কোন সংজ্ঞা , সেই সংজ্ঞাকে ভেঙে বার বার এই বলতে চায় - কোন জানাই যে তার শেষ জানা নয়, কোন জ্ঞানই তার অভিজ্ঞান নয়, সুতরাং কাল , মহাকাল, অতিমহাকাল...এই সমস্ত ব্যক্তিগত, আপেক্ষিক । শব্দ কম পড়ে যায় । তাহলে কি কবি সাইফুল ইসলাম বা কবি রণেন চ্যাটার্জি যে ফেসবুকে প্রতিদিন গোলাপ সহকারে একটা একটা করে কবিতা ছাপছেন, আর তাতে শত শত লাইক পড়ছে, সেই কবিতাগুলো কি কোনদিন কাল, বা মহাকাল কুড়িয়ে নেবে না?

 

অন্তত আমাদের অগ্রজ কবিরা সেই রকম বলে গেছেন, আজকের গুরুদেব কবিরাও সেই কথা বলছেন, গুরুদেব সাহিত্যকাররাও সেই কথা বলছেন । আমরা বুঝতে পারছি ব্যাপারটা সেই রকম, অর্থাৎ আমাদের একটা গ্রুমিং হচ্ছে, আমরা ধীরে ধীরে কোন একটা বলয়ে শিক্ষিত হচ্ছি । আমাদের একটা অরিয়েন্টেশন হচ্ছে । যে ভাবে কাঁচা লোহাকে এশিয়া মাইনরের সে রাখাল একটি চুম্বকে পরিণত করেছিলো ।

এভাবেও বলা যায়, যে কথা আমি বা আমরা জানতাম না, কোন গুরুদেব কবি এসে এক দশকের কথা বললেন, সেই দশকের কবিতা, গদ্য, উপন্যাস সম্পর্কে জানালেন। আর যেহেতু উনি গুরুদেব, সেই কথা আমাদের না মানলেই নয় । এই সমস্ত ঘটে একটা কগনিটিভ ডেভেলপমেন্টের মাধ্যমে । আমাদের জান্তে বা অজান্তেই হয় । যেভাবে একটি শিশু, হিট অ্যান্ড ট্রায়ালের মাধ্যমে শিক্ষা লাভ করে ।  এই ভাবে আমাদের বোধ জন্ম নেয় । পৃথিবী বোধ, পড়শি বোধ, নর-নারী বোধ, ভালোবাসা , ঘৃণা , ভয় বোধ । কবির মাথার ভিতরও এইভাবে কবিতা বোধ জন্মায় । কোন এক বোধ কাজ করে মাথার ভিতরে ।


আন্তর্সজ্জা


 

তা যখন আন্তর্সজ্জা বা অরিয়েন্টেশন নিয়ে কথা হচ্ছিলো , বোধ ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে কি ? অর্থাৎ প্রশ্ন আসে, সেই বোধ কি এক রৈখিক ? প্রিয় পাঠক এতক্ষণ এই সব প্রশ্ন, ভূমিকাকে পার করে আপনি নিশ্চয় এর একটি লজিক্যাল উত্তর চাইছেন ? আর যদি উপমা যদি চুম্বক হয় , তবে নিশ্চয়ই উত্তর ও দক্ষিণ মেরু বা দিক থাকবে । এইটা হলো আমাদের অরিয়েন্টেশন । অথবা দিক-মার্গ । আমরা অরিয়েন্টেশনকেও একটা বদ্ধ ধারণার ভিতর আটকে ফেললাম ।

এইবার দেখা যাক: দিক শুধু দক্ষিণ বা উত্তর কেন হতে যাবে । দিক তো আরও আছে । পুব পশ্চিম ঈশান, নৈর্ঋত ... সংজ্ঞা অনুযায়ী তবে দিক হয় 'দশ' । অর্থাৎ দশটি অরিয়েন্টেশন হবে ।নট ব্যাড । খানিক টা এগোনো গেলো । দুই দিক থেকে দশ দিকে পৌঁছানো গেলো । কিন্তু কিছুটা তথ্য ভুল ও হয়ে গেলো ।  চুম্বক কোন দিন দশ দিকে ওরিয়েন্টেশন হয় না । আর যদি হয়, সেটা হয় ইউনিডাইরেকশন ।

এই ভাবে আমি,  যে কোন শুঁয়োপোকার পরিণত রূপ একটি প্রজাপতি হিসাবে ধরতে পারি না । আপনিও হয়তো ধরবেন না । কিন্তু...  কিন্তু তাই বলে, তাই বলে তরুণ কবি সুজয়বরণ ঘোষ বা ডাকসাইটে মিস অনামিকা চ্যাটার্জী যে প্রতিদিন সেলফি সাজিয়ে সাজিয়ে ফেসবুকে কবিতা পোস্ট করেন, সে কি কবিতা লেখা বন্ধ করে দেবেন ? নাকি কবিকুল ফেসবুকে কবিতা লিখে কোন দিন মহাকালে স্থান পাবেন না ?

 

কবিতা বা টেক্সট লেখার অরিয়েন্টেশন রয়েছে । কিংবা থাকাটা তেমন অস্বাভাবিক না । টেক্সট একটি অভিধান ভিত্তিক শব্দাবলীর নেটওয়ার্ক । সেইখানে আমাদের দিক নির্ণয় ক্ষমতা প্রত্যেক টেক্সটকে একটি প্যাটার্ন দেয় । সেই টেক্সটি একটি মাত্র শব্দ হতে পারে অথবা অনেকগুলি শব্দের সমষ্টি । কিছু শব্দদিয়ে বাক্য গঠন করা যায়, কিছু দিয়ে ব্যাকরণ মতে বাক্য গঠন করা যায় না । অর্থাৎ সংজ্ঞাকে সংজ্ঞা অতিক্রম করে যায় । শব্দগোষ্ঠির নিজেরই একটা বৃত্ত আছে । জীবন চক্র । যেটা শিশু বা কবি বা ঔপন্যাসিক শেখেন, শিখতেই থাকেন । তার অরিয়েন্টেশন বাড়তে থাকে । তাতে দিক শুধু উত্তর দক্ষিণ বা দশদিকে আবদ্ধ থাকেনা । কোন বাক্যের যে কোন পদ থেকে অরিয়েন্টেশন বিচ্ছুরণ হতে থাকে ।  আর আমাদের ধারনা দিয়ে সেইটা পরিমাপ করার চেষ্টা করি, বলা যায় আমাদের পরিচিত প্যারামিটার দিয়ে তা মাপার চেষ্টা করি । দূরত্বকে কে সেন্টিমিটার, তাপমাত্রাকে ফারেনহাইট, আর প্রখ্যাত কবিকে আমরা মাপি সে কতগুলো পুরস্কার পেয়েছে । এই সব পরিমাপ আমাদের জানা । যেভাবে আমরা আন্দাজ করলাম যে মিস কমলিকার দেখা শুরুয়াতের শুঁয়োপোকাটি একটি প্রজাপতিতে পরিণত হবে । নট ব্যাড । এগেইন । এতটা বোধ আর দিগদর্শন নিয়ে নানান ফ্যাঁকড়া শোনার পরেও আমরা কিন্তু এই টেক্সটটা পড়েই চলেছি অথচ আমরা নিজেদের সিদ্ধান্ত থেকে এক কদমও নড়িনি ।

 

তাহলে, কি এখনই বলে দিতে হবে শুঁয়োপোকাটির কি হবে ? তার কি দুটো মোলায়েম হালকা পাতার হলুদ ডানা হবে ? তাতে চিহ্ন থাকবে ওঁ ? কচি সবুজের উপর দিয়ে সে উড়াল দেবে অন্য কোন বাগিচায় ?  কথা হলো এই যে, এইটা আমার একান্ত ব্যক্তিগত ধারণা , নিজস্ব অভিমত , মৌলিক ভাবনা পরিসর ।  আমার মতে, আমাদের প্রত্যেকটি শুঁয়োপোকার জীবনচক্রের ডায়েরী রাখা অসম্ভব । কিংবা সে খবর রেখেই বা কি হবে । আর যদিবা প্রত্যেক শুঁয়োপোকা প্রজাপতি হলো, বা নাই হলো , তার উত্তরসূরি শুঁয়োপোকার  জীবনচক্রে কাল, মহাকাল, অতিমহাকাল কি করছেন বা করবেন - তার হিসাব আমরা কি করে রাখবো ? হুম । শুধু অসম্ভবই না, মহাঅসম্ভব, অতিমহাঅসম্ভব ।  অন্তত মানব সমাজে এইরকম কবি, সম্পাদক, লেখক, গল্পকার, নাট্যকার, অথবা কোন করণিক জন্মান নি যিনি এই কাজটি করে যেতে পারেন । এই কাজটি করতে  যে যত্ন, যে যোগাযোগ, যে নেটওয়ার্ক অবশ্য জরুরী তা বাংলা ভাষার বর্তমান পরিসরে অনুপস্থিত । এটা হলো আমাদের জানা কথা । এইযে বালিকা কমলিকা  প্রামাণিক – বিকেল থেকে ফুলের বাগানে গুনগুন গুঞ্জন করছেন, তাকে এখনই বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণযৌবনা বানাবেন না, তাকে বধুরূপে, কুচশোভিত পুস্তকহস্তে সরস্বতী রূপে কল্পনা নাই বা করলেন । সে আপন তন-মনে বিকশিত হতে চায় ।  সে চায় তার নিজের প্রেমের অরিয়েন্টেশন । নিজের ধ্বনিপল্লবের দিগদর্শন।  আর এইটাও হলো অজানা ।  যে প্রস্ফুটন, যে নাজুক সুগন্ধি ফুল তার মানব মনে লুকিয়ে আছে তাকে মুকুলেই উৎপাটিত কোর না  । 

 

 

কমলিকা ভাবেন, এইসব ফুলবাগানের কথা । গুল্মের আবছায়া , মাটির সোঁদা-গন্ধ ছোঁয়া তার গায়ে জড়িয়ে থাকে । সে দেখেন, এই বারান্দা থেকে গ্রামের আড়পার দেখা যায় । ঐ গ্রামটির নাম মধুপুর । আর ঐ আকাশের নাম নীল । গোধূলি পার হয়ে যায় তার দৃষ্টি । কতটা দূর হবে মধুপুর কদমখালি থেকে । গ্রামে কোন মাইলস্টোন নেই । তার ইতিহাস আছে । তাই ভূগোল ও আছে । দিল্লি থেকে লাহোর কতটা দূরত্ব ? চেন্নাই থেকে সিডনি ? গুগল করলে দেখা যায় ৯১২০ কিলো মিটার । উইকিপিডিয়াও তাই বলে । মাপিপিডিয়াও । আমিও তাই বলি। আপনিও তাই বলেন । এটাই সত্য । এইবার, আমি মানে, আমি পীযূষকান্তি বিশ্বাস, যে মাঝে মাঝে খেয়লাখুশী হলে কবিতা লিখি, আর আপনি মানে যে আমাকে কবি হিসাবে মানেন না - অথচ এই যে এই লেখাটা পড়ছেন । এসবই ঘটছে ২০২০ সালে । মানে সত্য ঘটনা । এইবার যদি ঘড়িটা ২০০০০০০০ বছর এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, কিংবা ২০০০০০০০ বছর পিছিয়ে নেওয়া যায় - কল্পনা করুন দিল্লি যদিও দিল্লি ততদিন থাকে, সিডনি ততদিন যদি সিডনি থাকে, এবং ধরলাম গুগল ততদিন থাকে, আপনিও বেঁচে থাকলেন, আমিও বেঁচে থাকলেন । এতকিছু ধরে নেওয়ার পরেও ... মহাজাগতিক ভূগোল বলছেন, অস্ট্রেলিয়া আগে ভারতেরই অঙ্গরাজ্য ছিলো । কোন এক সময় তা মূল ভূখন্ড থেকে আলাদা হয়ে গেছে । অর্থাৎ চেন্নাই আর সিডনির দূরত্ব ছিলো শূন্য । তুমি কি শুধু মিথ, শুধু পটে লেখা ? হুম । ঐ যে কথাটা যা সত্য বলে ধরেছিলাম, তাহা মহাসময়ের তারতম্যে মিথ্যা । কিংবা জাস্ট মিথ । কিংবা সত্যমিথ্যা কিছুই ঠাহর হয় না ।  

ভূলোক


 

এখানে এইটি টাইমলাইন দেওয়া যাক, যদি সত্যিই কোন টাইমম্যাসিন থাকতো । মানব সভ্যতার ইতিহাস, ভবিষ্যৎ নিয়ে এতো কথার সুযোগ থাকতো না । সাহিত্য কি হবে, সাহিত্য কি হবে না, মানুষ পড়বে , মানুষ পড়বে না , অনেক কথার উত্তর পাওয়া যেতো। এমনও তো হতে পারে, মানুষ আগে মানুষ ছিলো না, কিংবা মানুষ পরে মানুষ থাকবে না । কবি কবি থাকবে না, সম্পাদক সম্পাদক থাকবে না । হতেই পারে। একটা সত্য, অসত্য, অর্ধসত্য, কাল্পনিক সত্যের একটা প্লট করে টাইমলাইনে ফেলা যাক ।    

 

একটা তারিখ যদি আমরা নির্ধারণ করি । এই ধরুন আজ । খ্রিস্টাব্দ হিসাবে ধরলে ২০২০ । মানে ০ খ্রিস্টাব্দকে বেসলাইন ধরলে, আমরা ২০২০ আর্থ-ইয়ার পার করে এলাম । এখন সাহিত্যের আধুনিক যুগ, অনেকে আধুনিকোত্তর যুগ, বা উত্তর আধুনিক যুগ বলে থাকেন । অন্যান্য ভাষাকে আলোচনার বাইরে রাখলে যা দাঁড়াচ্ছে, বাংলা ভাষার প্রাচীন যুগ শুরু হচ্ছে ৬৫০ খ্রিস্টাব্দে । তথ্যসূত্র: বাংলাপিডিয়া । “বাংলা সাহিত্য কালবিচারে বাংলা সাহিত্যকে তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়: প্রাচীন যুগ (৬৫০-১২০০), মধ্যযুগ (১২০০-১৮০০) ও আধুনিক যুগ (১৮০০-)। মধ্যযুগ আবার তিনভাগে বিভক্ত: আদি-মধ্যযুগ (১২০০-১৩৫০), মধ্য-মধ্যযুগ (১৩৫০-১৭০০) ও অন্ত্য-মধ্যযুগ (১৭০০-১৮০০)। অনুরূপভাবে আধুনিক যুগও কয়েকটি ভাগে বিভক্ত: প্রস্ততিপর্ব (১৮০০-১৮৬০), বিকাশের যুগ (১৮৬০-১৯০০), রবীন্দ্র-পর্ব (১৯০০-১৯৩০), রবীন্দ্রোত্তর পর্ব (১৯৩০-১৯৪৭) এবং বাংলাদেশ পর্ব (১৯৪৭-)।” 

এমত অবস্থায় যুগের ভিতর যদি ব্যবধান আমরা দেখি, ৭-৮ শতাব্দীতেই  যুগ পালটে যাচ্ছে । মানে, আমরা আধুনিক যুগ, অন্য মতে উত্তর আধুনিক-যুগে আছি বা এই মাত্র পার করেছি । ব্যাকরণে যেহেতু আধুনিক থেকে আরও আধুনিক শব্দ নেই, তাই আন্দাজ করা যায় এই যুগ স্কিম করাটা একটা টেম্পোরারি এরেঞ্জমেন্ট, সাময়িক ধারণা মাত্র । আধুনিক যুগ যদি ১৮০১ সালে শুরু হয়, আন্দাজ অনুযায়ী ২৫০০ সাল নাগাদ সেই যুগ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা । তখন, ব্যাকরণ কে ভেঙে ফেলবে ব্যাকরণ । তিন ডিগ্রির সুপারলেটিভকে রিপ্লেসে করবে মাল্টিডিগ্রির ডাইনামিকস । সেই স্টেজ পার করলেই নব্য নব্য প্রেফিক্স/সাফিক্স উপলব্ধ হবে । এই নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা, এই রচনার পরিসরের বাইরে ।