আমি একদিনও না দেখলাম তারে।। বাড়ীর কাছে আরশী নগর, এক পড়শী বসত করে।। গেরাম বেড়া অগাধ পানি; নাই কিনারা নাই তরণী পারে।। ধরব ধরব মনে করি, কেমনে সেথা যাইরে।। কি কব পড়শীর কথা, হস্তপদ স্কন্ধ মাথা নাইরে, ক্ষণে থাকে শূন্য ভরে, ক্ষণে ভাসে নীরে।। পড়শী যদি আমায় ছুতো, যম যাতনা সকল যেত দূরে, সে আর লালন একখানে রয়, লক্ষ যোজন ফাঁকরে।।
কমলিকার কঃ
Tuesday, 23 June 2020
জানালার ওপারে জানালা
Sunday, 14 June 2020
সাতটি তারা যখন উঠেছে ফুটে
ওরে ভীরু, তোমার হাতে নাই ভূবনের ভার। হালের কাছে মাঝি আছে, করবে তরী পার ॥ তুফান যদি এসে থাকে তোমার কিসের দায়-- চেয়ে দেখো ঢেউয়ের খেলা, কাজ কি ভাবনায়? আসুক-নাকো গহন রাতি, হোক-না অন্ধকার-- হালের কাছে মাঝি আছে, করবে তরী পার ॥ পশ্চিমে তুই তাকিয়ে দেখিস মেঘে আকাশ ডোবা, আনন্দে তুই পুবের দিকে দেখ্-না তারার শোভা। সাথি যারা আছে তারা তোমার আপন ব'লে ভাবো কি তাই রক্ষা পাবে তোমারি ওই কোলে? উঠবে রে ঝড়, দুলবে রে বুক, জাগবে হাহাকার-- হালের কাছে মাঝি আছে, করবে তরী পার ॥
আমাকে লিখলেন কবি
Saturday, 6 June 2020
খেলিছো এ বিশ্ব লয়ে
খেলিছ এ বিশ্ব লয়ে বিরাট শিশু আনমনে। প্রলয় সৃষ্টি তব পুতুল খেলা নিরজনে প্রভু নিরজনে।। শূন্যে মহা আকাশে মগ্ন লীলা বিলাসে, ভাঙিছ গড়িছ নিতি ক্ষণে ক্ষণে।। তারকা রবি শশী খেলনা তব, হে উদাসী, পড়িয়া আছে রাঙ্ পায়ের কাছে রাশি রাশি। নিত্য তুমি, হে উদার সুখে দুখে অবিকার, হাসিছ খেলিছ তুমি আপন মনে।।
এই শিশুর নাম কমলিকা । শিশু শিখছে, খেলছে, ভাঙ্গছে । তার কবিতা লিখে ওঠার দায় নেই । সনেট হলো, না হলো । ভিলানেল হলো, না হলো , সেই বিচারের জন্য তারকা রবি শশীর খেলোয়াড় , তাদের নিজস্ব আম্পায়ার নিয়ে আছেন ।
ভিলানেল
Friday, 5 June 2020
কমলিকার দ্বিতীয় কবিতা
Saturday, 30 May 2020
শুঁয়োপোকা
বালিকা
দেখেছেন এই বালিকাকে ? কমলিকা । কমলিকা প্রামাণিক । দশম শ্রেণী । পিতা: অবনী প্রামাণিক
। সাল: ২০২০ খ্রিস্টাব্দ । সময়: বেলা দ্বিপ্রহর । সময় বয়ে যায় । দিন চলে যায় । কমলিকা বিকেল নিয়ে বসে আছে কাঁচা
মাটির বারান্দায় । এই গ্রামে, বেশীর ভাগই মাটির ঘর । তাকে ব্যস্ত করে রাখে বিকেলের
নিভে আসা, একলা যাপন, বিদ্যালয়, সিলেবাস, পাটিগণিত, জীবনবিজ্ঞান, বাংলার জীবনানন্দের
শটিবনের ছায়া । তার বিকেল মানে কৈশোর ছাপিয়ে একান্ত মুকুরের হাতছানি । তার শরীর আর
কল্পনার এক উজ্জ্বল মিশ্র-কলার বিস্ময় । ঘরের কানাচ ভরে তার আমড়া গাছ, কাঁঠাল গাছ,
কাঁটা-ঝাড়, আস্টেল আর গুল্মের বাগান । ফুলবাগানের পাশ দিয়ে কাঁচা পায়ে হাটা রাস্তা
চলে যায় প্রপিতামহের কোদালে কাটা পারিবারিক পুকুরের ঘাটে । আম জাম সজিনার বনস্পতির
সবুজ প্রান্তে তার যেন একান্ত অবসর । এই হলো সৌন্দর্য । সে লক্ষ্য করছে অনেকক্ষণ ধরে,
একটি সবুজ গুল্মের ডালে কোমর বেঁকিয়ে হেঁটে যায় একটি শুঁয়াপোকা ।
কমলিকা বিস্মিত চোখে দেখছেন, শুঁয়োপোকাটা পায়ে পায়ে হেঁটে যাচ্ছে শাখা প্রশাখায়
। ওর গায়ে সবুজ পাতার ছায়া । ছায়াও যেন কিছুটা সবুজ । সে হেঁটে যাচ্ছে আগামী মুহূর্তগুলির পরিসীমায়, আর
একটি মুহূর্ত বুঝি যে কোন সময় এই 'ড্রিম মোমেন্ট' , 'আহা' শব্দে উপনীত হতে পারে । মোহময়
পৃথিবীতে আগামী জীবনের এই সমস্ত অভিজ্ঞান কোন শুঁয়ো, কোন পিঁপড়ে জানে নি বোধহয় । মানুষও
বোধহয় না ।কাল কি হবে মানুষ তা জানে না । আর বিশ্বভরা প্রাণের মধ্যে মানব-প্রজাতিই
এক মাত্র যখন বাড়তি । মানুষ তার আগামীর তাড়নায় পিষে যাচ্ছে নিজে । নিজের ভারে, নিজেই
ন্যুজ । মেধার বাণিজ্যে পসার হচ্ছে স্বয়ং মানুষ ।
মানুষ দ্রব্য । মানুষ শিল্প । শিল্প
পণ্য । শিল্পবুমে ফেটে পড়েছে অন্তর্জালিকা। সোশাল মিডিয়ায় শিল্পকর্মের জোয়ার । অধিক
থেকে অধিকতর হোমো সেপিয়েন্স গান গাইছে, নাটক করছে, সিনেমা করছে, ছবি আঁকছে এবং অবশ্যই
কবিতা লিখছে । বলা যায়, শিল্পমাধ্যমের ভিতর কবিতা লেখা একটা অধ্যায় যা অন্যতর মাত্রায়
পৌঁছে গেছে । তাতে ভারতবর্ষ কেন পিছিয়ে থাকবে ? আর বাংলা ? বাংলা ও বাঙালির কাব্য প্রিয়তা
নিশ্চয়ই অজানা নয় । বাংলা ভাষায় কবিতার মান কি, বাংলা কবিতার স্থান ও আগামীর সম্ভাব্য
নিয়ে আমাদের উৎসুকতা বাড়ছে । এমতাবস্থায়, এমন কি কি প্যারামিটার বাংলা কবিতাকে নিয়ন্ত্রণ
করছে ? কতগুলি উপাদান, শুধু বাংলা ও বাঙালি আর কতগুলি ফ্যাক্টর বহিরাগত । সাধারণ জ্ঞানে এইটুকু বলা যায়, বাংলা সাহিত্যের
কবিতাকে বাঙালি ছাড়াও অন্যান্য অনেক কিছুই তার নিয়ন্ত্রণ করে । এই ফেসবুক, যা কিনা
বাঙ্গালির নিজস্ব নয়, অথচ তা নির্ধারণ করছে কার জনপ্রিয় হবে আর কার কবিতা বিক্রি হবে
। বাজার যদিও বাংলার, কিন্তু ফ্যাক্টরটি বহিরাগত । বরং বলা যায় কি বিক্রি হবে আর কি বিক্রি হবে তার
কতটুকু বাঙ্গালির হাতে ? বাঙ্গালির (কবিতা) পাঠ , কাব্য প্রিয়তা, পদ্য অন্তরঙ্গতা,
গদ্য প্রস্তুতি সাহিত্য-বাস্তুতন্ত্রের কোন পর্যায়ে তা ভাষা নিজে নিয়ন্ত্রণ করছে না
। বাঙ্গালির কবিতা লেখার প্রয়াস, শব্দবন্ধ, শব্দচাষ, গীতিময়তা, আধুনিকতা, সাহিত্য ভাষা,
কবিতা, গদ্য কোন রূপে কোন পথে অদূর আগামীতে চালিত হবে তার কোন রূপরেখা আমাদের সত্যই
জানা নেই । কিন্তু কিছুটা আন্দাজ করা যায় ।
প্রজাপতি
কমলিকা দেখছেন নজর করে , একটি ডাল থেকে অন্য একটি ডালে হেঁটে এসে
শুঁয়োপোকাটি এসে কোমর উঁচুকরে এসে দাড়ালো ।
লাফও দিতে পারে । কিংবা সে লাফ দেবে না । কিংবা
হতে পারে শুঁয়োপোকাটি প্রস্তুতি নিচ্ছে আগামী জীবনের ঘনঘটার ।
সন্ধ্যা আর বিকালের পরিবর্তনচক্রে যে কোন মুহূর্তে সে হয়ে যেতে পারে পূর্ণবয়স্ক পিউপা, যে কোন মুহূর্তেই সে আলস্য ভেঙে খসিয়ে দেবে খোলস । ট্রিগার
করবে করবে একটি অভিনব শিল্প ভাবনা
। আহা ।
হলুদ, সবুজ, রংবেরঙ্গী রূপনিয়ে সে এক প্রজাপতি হয়ে বিকেলের হাল্কা হাওয়ায়
মিলিয়ে দিতে পারে পাখনা ? অবাক চোখে তাকে দেখে
যে কেউ বলতে পারে “ওয়াও” । এইসব কথা আমাদের এই সীমিত পরিসরে জানা নেই , তবে
আন্দাজ করা যায় ।
আসলে যে কোন পোকা , তা শুঁয়ো হোক বা কাঁচ, তার একটা জীবনচক্র আছে । তার আগামী কি,
তারক্ষন বা জীবন বৃত্তের ভিতর যে টুকু অবসর সেইটুকুন আমার দেখেছি, আর যেহেতু তাকে বেশ
কয়েকবার আমরা প্রজাপতি হয়ে যেতে দেখেছি, সুতরাং বলা যায় কিছু কিছু শুঁয়ো পোকা আগামীতে
প্রজাপতি হয়ে উড়ে যাবে । পিরিয়ড ।
এই বক্তব্যে তেমন কিছু যুক্তি তর্ক প্রমান হলো না । এই সব তো জানা কথা । অবশ্যই
সব আমাদের জানা । যেমন জানি সূর্য পুব দিকে ওঠে- পশ্চিমে অস্ত যায় । যেমন জানি, জন্মালে
একদিন মরতে হবে । যেমন জানি কমলিকা দশম শ্রেণী পাশ করে, উচ্চ
মাধ্যমিক দেবে । পূর্ণ যৌবনা হয়ে সে একদিন বিশ্ববিদ্যালয় যাবে । আমাদের ওই টুকুনই
জানা, যা আমরা দেখেছি, বা শুনেছি । এই টুকুই আমাদের জানাঅজানার বৃত্ত
। এ হেন উপপাদ্যে বাংলা সাহিত্যের, বাংলা কবিতার, সর্বোপরি বাংলা ভাষার ঐটুকুই আমরা
জানি, যা আমরা ছুঁয়ে দেখেছি, ক্লাসে পড়েছি । সাহিত্য আড্ডায় অবগত হয়েছি
অথবা কোন কবিতা উতসবে শহস্র কবিদের গলায় গমগম মাইকের আওয়াজে ‘কবিতা’ শুনেছি । সুতরাং এই যুক্তিতে আন্দাজ করাই
যায়, যে কোন কবি তাই যে কোন সময় প্রজাপতি হয়ে উড়াল দিতে পারে । আবার নাও পারে ।
বোধ
সংজ্ঞাকে অতিক্রম করে সংজ্ঞা । এই সব শোনা-দেখা-বোঝা একটা লাইফ-সাইকেল বা জীবনচক্রের
মতো । অর্থাৎ একটা সময়ের ব্যবধানের যার পরিসর পালটে যায় । এই ব্যাপারটি কোন দশক, বা
শতক দিয়ে অনেকবার ব্যাখ্যা করে হয়েছে, কিন্তু কোথাও না কোথাও একটা সীমানা বা লাইন এসে
নিজেই নিজেকে ভেঙে দিয়েছে । যে কোন সংজ্ঞা , সেই সংজ্ঞাকে ভেঙে বার বার এই বলতে চায়
- কোন জানাই যে তার শেষ জানা নয়, কোন জ্ঞানই তার অভিজ্ঞান নয়, সুতরাং কাল , মহাকাল,
অতিমহাকাল...এই সমস্ত ব্যক্তিগত, আপেক্ষিক । শব্দ কম পড়ে যায় । তাহলে কি কবি সাইফুল
ইসলাম বা কবি রণেন চ্যাটার্জি যে ফেসবুকে প্রতিদিন গোলাপ সহকারে একটা একটা করে কবিতা
ছাপছেন, আর তাতে শত শত লাইক পড়ছে, সেই কবিতাগুলো কি কোনদিন কাল, বা মহাকাল কুড়িয়ে নেবে
না?
অন্তত আমাদের অগ্রজ কবিরা সেই রকম বলে গেছেন, আজকের গুরুদেব কবিরাও সেই কথা বলছেন,
গুরুদেব সাহিত্যকাররাও সেই কথা বলছেন । আমরা বুঝতে পারছি ব্যাপারটা সেই রকম, অর্থাৎ
আমাদের একটা গ্রুমিং হচ্ছে, আমরা ধীরে ধীরে কোন একটা বলয়ে শিক্ষিত হচ্ছি । আমাদের একটা
অরিয়েন্টেশন হচ্ছে । যে ভাবে কাঁচা লোহাকে এশিয়া মাইনরের সে রাখাল একটি চুম্বকে পরিণত
করেছিলো ।
এভাবেও বলা যায়, যে কথা আমি বা আমরা জানতাম না, কোন গুরুদেব কবি এসে এক দশকের কথা
বললেন, সেই দশকের কবিতা, গদ্য, উপন্যাস সম্পর্কে জানালেন। আর যেহেতু উনি গুরুদেব, সেই
কথা আমাদের না মানলেই নয় । এই সমস্ত ঘটে একটা কগনিটিভ ডেভেলপমেন্টের মাধ্যমে । আমাদের
জান্তে বা অজান্তেই হয় । যেভাবে একটি শিশু, হিট অ্যান্ড ট্রায়ালের মাধ্যমে শিক্ষা লাভ
করে । এই ভাবে আমাদের বোধ জন্ম নেয় । পৃথিবী
বোধ, পড়শি বোধ, নর-নারী বোধ, ভালোবাসা , ঘৃণা , ভয় বোধ । কবির মাথার ভিতরও এইভাবে কবিতা
বোধ জন্মায় । কোন এক বোধ কাজ করে মাথার ভিতরে ।
আন্তর্সজ্জা
তা যখন আন্তর্সজ্জা বা অরিয়েন্টেশন নিয়ে কথা হচ্ছিলো , বোধ ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে
কি ? অর্থাৎ প্রশ্ন আসে, সেই বোধ কি এক রৈখিক ? প্রিয় পাঠক এতক্ষণ এই সব প্রশ্ন, ভূমিকাকে
পার করে আপনি নিশ্চয় এর একটি লজিক্যাল উত্তর চাইছেন ? আর যদি উপমা যদি চুম্বক হয় ,
তবে নিশ্চয়ই উত্তর ও দক্ষিণ মেরু বা দিক থাকবে । এইটা হলো আমাদের অরিয়েন্টেশন । অথবা
দিক-মার্গ । আমরা অরিয়েন্টেশনকেও একটা বদ্ধ ধারণার ভিতর আটকে ফেললাম ।
এইবার দেখা যাক: দিক শুধু দক্ষিণ বা উত্তর কেন হতে যাবে । দিক তো আরও আছে । পুব
পশ্চিম ঈশান, নৈর্ঋত ... সংজ্ঞা অনুযায়ী তবে দিক হয় 'দশ' । অর্থাৎ দশটি অরিয়েন্টেশন
হবে ।নট ব্যাড । খানিক টা এগোনো গেলো । দুই দিক থেকে দশ দিকে পৌঁছানো গেলো । কিন্তু
কিছুটা তথ্য ভুল ও হয়ে গেলো । চুম্বক কোন দিন
দশ দিকে ওরিয়েন্টেশন হয় না । আর যদি হয়, সেটা হয় ইউনিডাইরেকশন ।
এই ভাবে আমি, যে কোন শুঁয়োপোকার পরিণত
রূপ একটি প্রজাপতি হিসাবে ধরতে পারি না । আপনিও হয়তো ধরবেন না । কিন্তু... কিন্তু তাই বলে, তাই বলে তরুণ কবি সুজয়বরণ ঘোষ বা
ডাকসাইটে মিস অনামিকা চ্যাটার্জী যে প্রতিদিন সেলফি সাজিয়ে সাজিয়ে ফেসবুকে কবিতা পোস্ট
করেন, সে কি কবিতা লেখা বন্ধ করে দেবেন ? নাকি কবিকুল ফেসবুকে কবিতা লিখে কোন দিন মহাকালে
স্থান পাবেন না ?
কবিতা বা টেক্সট লেখার অরিয়েন্টেশন রয়েছে । কিংবা থাকাটা তেমন অস্বাভাবিক না ।
টেক্সট একটি অভিধান ভিত্তিক শব্দাবলীর নেটওয়ার্ক । সেইখানে আমাদের দিক নির্ণয় ক্ষমতা
প্রত্যেক টেক্সটকে একটি প্যাটার্ন দেয় । সেই টেক্সটি একটি মাত্র শব্দ হতে পারে অথবা
অনেকগুলি শব্দের সমষ্টি । কিছু শব্দদিয়ে বাক্য গঠন করা যায়, কিছু দিয়ে ব্যাকরণ মতে
বাক্য গঠন করা যায় না । অর্থাৎ সংজ্ঞাকে সংজ্ঞা অতিক্রম করে যায় । শব্দগোষ্ঠির নিজেরই
একটা বৃত্ত আছে । জীবন চক্র । যেটা শিশু বা কবি বা ঔপন্যাসিক শেখেন, শিখতেই থাকেন ।
তার অরিয়েন্টেশন বাড়তে থাকে । তাতে দিক শুধু উত্তর দক্ষিণ বা দশদিকে আবদ্ধ থাকেনা ।
কোন বাক্যের যে কোন পদ থেকে অরিয়েন্টেশন বিচ্ছুরণ হতে থাকে । আর আমাদের ধারনা দিয়ে সেইটা পরিমাপ করার চেষ্টা
করি, বলা যায় আমাদের পরিচিত প্যারামিটার দিয়ে তা মাপার চেষ্টা করি । দূরত্বকে কে সেন্টিমিটার,
তাপমাত্রাকে ফারেনহাইট, আর প্রখ্যাত কবিকে আমরা মাপি সে কতগুলো পুরস্কার পেয়েছে । এই
সব পরিমাপ আমাদের জানা । যেভাবে আমরা আন্দাজ করলাম যে মিস কমলিকার দেখা শুরুয়াতের শুঁয়োপোকাটি
একটি প্রজাপতিতে পরিণত হবে । নট ব্যাড । এগেইন । এতটা বোধ আর দিগদর্শন নিয়ে নানান ফ্যাঁকড়া
শোনার পরেও আমরা কিন্তু এই টেক্সটটা পড়েই চলেছি অথচ আমরা নিজেদের সিদ্ধান্ত থেকে এক
কদমও নড়িনি ।
তাহলে, কি এখনই বলে দিতে হবে শুঁয়োপোকাটির কি হবে ? তার কি দুটো মোলায়েম হালকা
পাতার হলুদ ডানা হবে ? তাতে চিহ্ন থাকবে ওঁ ? কচি সবুজের উপর দিয়ে সে উড়াল দেবে অন্য
কোন বাগিচায় ? কথা হলো এই যে, এইটা আমার একান্ত
ব্যক্তিগত ধারণা , নিজস্ব অভিমত , মৌলিক ভাবনা পরিসর । আমার মতে, আমাদের প্রত্যেকটি শুঁয়োপোকার জীবনচক্রের
ডায়েরী রাখা অসম্ভব । কিংবা সে খবর রেখেই বা কি হবে । আর যদিবা প্রত্যেক শুঁয়োপোকা
প্রজাপতি হলো, বা নাই হলো , তার উত্তরসূরি শুঁয়োপোকার জীবনচক্রে কাল, মহাকাল, অতিমহাকাল কি করছেন বা করবেন
- তার হিসাব আমরা কি করে রাখবো ? হুম । শুধু অসম্ভবই না, মহাঅসম্ভব, অতিমহাঅসম্ভব । অন্তত মানব সমাজে এইরকম কবি, সম্পাদক, লেখক, গল্পকার,
নাট্যকার, অথবা কোন করণিক জন্মান নি যিনি এই কাজটি করে যেতে পারেন । এই কাজটি করতে যে যত্ন, যে যোগাযোগ, যে নেটওয়ার্ক অবশ্য জরুরী
তা বাংলা ভাষার বর্তমান পরিসরে অনুপস্থিত । এটা হলো আমাদের জানা কথা । এইযে বালিকা
কমলিকা প্রামাণিক – বিকেল থেকে ফুলের বাগানে
গুনগুন গুঞ্জন করছেন, তাকে এখনই বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণযৌবনা বানাবেন না, তাকে বধুরূপে,
কুচশোভিত পুস্তকহস্তে সরস্বতী রূপে কল্পনা নাই বা করলেন । সে আপন তন-মনে বিকশিত হতে
চায় । সে চায় তার নিজের প্রেমের অরিয়েন্টেশন
। নিজের ধ্বনিপল্লবের দিগদর্শন। আর এইটাও হলো
অজানা । যে প্রস্ফুটন, যে নাজুক সুগন্ধি ফুল
তার মানব মনে লুকিয়ে আছে তাকে মুকুলেই উৎপাটিত কোর না ।
কমলিকা ভাবেন, এইসব ফুলবাগানের কথা । গুল্মের আবছায়া , মাটির সোঁদা-গন্ধ ছোঁয়া তার গায়ে জড়িয়ে থাকে । সে দেখেন, এই বারান্দা থেকে গ্রামের আড়পার দেখা যায় । ঐ গ্রামটির নাম মধুপুর । আর ঐ আকাশের নাম নীল । গোধূলি পার হয়ে যায় তার দৃষ্টি । কতটা দূর হবে মধুপুর কদমখালি থেকে । গ্রামে কোন মাইলস্টোন নেই । তার ইতিহাস আছে । তাই ভূগোল ও আছে । দিল্লি থেকে লাহোর কতটা দূরত্ব ? চেন্নাই থেকে সিডনি ? গুগল করলে দেখা যায় ৯১২০ কিলো মিটার । উইকিপিডিয়াও তাই বলে । মাপিপিডিয়াও । আমিও তাই বলি। আপনিও তাই বলেন । এটাই সত্য । এইবার, আমি মানে, আমি পীযূষকান্তি বিশ্বাস, যে মাঝে মাঝে খেয়লাখুশী হলে কবিতা লিখি, আর আপনি মানে যে আমাকে কবি হিসাবে মানেন না - অথচ এই যে এই লেখাটা পড়ছেন । এসবই ঘটছে ২০২০ সালে । মানে সত্য ঘটনা । এইবার যদি ঘড়িটা ২০০০০০০০ বছর এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, কিংবা ২০০০০০০০ বছর পিছিয়ে নেওয়া যায় - কল্পনা করুন দিল্লি যদিও দিল্লি ততদিন থাকে, সিডনি ততদিন যদি সিডনি থাকে, এবং ধরলাম গুগল ততদিন থাকে, আপনিও বেঁচে থাকলেন, আমিও বেঁচে থাকলেন । এতকিছু ধরে নেওয়ার পরেও ... মহাজাগতিক ভূগোল বলছেন, অস্ট্রেলিয়া আগে ভারতেরই অঙ্গরাজ্য ছিলো । কোন এক সময় তা মূল ভূখন্ড থেকে আলাদা হয়ে গেছে । অর্থাৎ চেন্নাই আর সিডনির দূরত্ব ছিলো শূন্য । তুমি কি শুধু মিথ, শুধু পটে লেখা ? হুম । ঐ যে কথাটা যা সত্য বলে ধরেছিলাম, তাহা মহাসময়ের তারতম্যে মিথ্যা । কিংবা জাস্ট মিথ । কিংবা সত্যমিথ্যা কিছুই ঠাহর হয় না ।
ভূলোক
এখানে এইটি টাইমলাইন দেওয়া যাক, যদি সত্যিই কোন টাইমম্যাসিন থাকতো । মানব সভ্যতার ইতিহাস, ভবিষ্যৎ নিয়ে এতো কথার সুযোগ থাকতো না । সাহিত্য কি হবে, সাহিত্য কি হবে না, মানুষ পড়বে , মানুষ পড়বে না , অনেক কথার উত্তর পাওয়া যেতো। এমনও তো হতে পারে, মানুষ আগে মানুষ ছিলো না, কিংবা মানুষ পরে মানুষ থাকবে না । কবি কবি থাকবে না, সম্পাদক সম্পাদক থাকবে না । হতেই পারে। একটা সত্য, অসত্য, অর্ধসত্য, কাল্পনিক সত্যের একটা প্লট করে টাইমলাইনে ফেলা যাক ।
একটা তারিখ যদি আমরা নির্ধারণ করি । এই ধরুন আজ । খ্রিস্টাব্দ হিসাবে ধরলে ২০২০
। মানে ০ খ্রিস্টাব্দকে বেসলাইন ধরলে, আমরা ২০২০ আর্থ-ইয়ার পার করে এলাম । এখন সাহিত্যের
আধুনিক যুগ, অনেকে আধুনিকোত্তর যুগ, বা উত্তর আধুনিক যুগ বলে থাকেন । অন্যান্য ভাষাকে
আলোচনার বাইরে রাখলে যা দাঁড়াচ্ছে, বাংলা ভাষার প্রাচীন যুগ শুরু হচ্ছে ৬৫০ খ্রিস্টাব্দে
। তথ্যসূত্র: বাংলাপিডিয়া । “বাংলা সাহিত্য কালবিচারে বাংলা সাহিত্যকে তিনটি প্রধান
ভাগে ভাগ করা যায়: প্রাচীন যুগ (৬৫০-১২০০), মধ্যযুগ (১২০০-১৮০০) ও আধুনিক যুগ (১৮০০-)।
মধ্যযুগ আবার তিনভাগে বিভক্ত: আদি-মধ্যযুগ (১২০০-১৩৫০), মধ্য-মধ্যযুগ (১৩৫০-১৭০০) ও
অন্ত্য-মধ্যযুগ (১৭০০-১৮০০)। অনুরূপভাবে আধুনিক যুগও কয়েকটি ভাগে বিভক্ত: প্রস্তুতিপর্ব (১৮০০-১৮৬০), বিকাশের যুগ (১৮৬০-১৯০০), রবীন্দ্র-পর্ব (১৯০০-১৯৩০),
রবীন্দ্রোত্তর পর্ব (১৯৩০-১৯৪৭) এবং বাংলাদেশ পর্ব (১৯৪৭-)।”
এমত অবস্থায় যুগের ভিতর যদি ব্যবধান আমরা দেখি, ৭-৮ শতাব্দীতেই যুগ পালটে যাচ্ছে । মানে, আমরা আধুনিক যুগ, অন্য
মতে উত্তর আধুনিক-যুগে আছি বা এই মাত্র পার করেছি । ব্যাকরণে যেহেতু আধুনিক থেকে আরও
আধুনিক শব্দ নেই, তাই আন্দাজ করা যায় এই যুগ স্কিম করাটা একটা টেম্পোরারি এরেঞ্জমেন্ট,
সাময়িক ধারণা মাত্র । আধুনিক যুগ যদি ১৮০১ সালে শুরু হয়, আন্দাজ অনুযায়ী ২৫০০ সাল নাগাদ
সেই যুগ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা । তখন, ব্যাকরণ কে ভেঙে ফেলবে ব্যাকরণ । তিন ডিগ্রির সুপারলেটিভকে
রিপ্লেসে করবে মাল্টিডিগ্রির ডাইনামিকস । সেই স্টেজ পার করলেই নব্য নব্য প্রেফিক্স/সাফিক্স
উপলব্ধ হবে । এই নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা, এই রচনার পরিসরের বাইরে ।